বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান

 

স্টাফ রিপোর্টার: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণপূর্ব অংশ ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটিই শনিবার রাত ৯টার পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। এর আগে এটি নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিক থেকে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী ২০ মে দুপুরের পর যে কোনো সময়ে এটি উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং ‘কম্পিউটার মডেল’ বিশে¬ষণ করে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা এ কথা জানিয়েছেন। আম্ফান বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়। দেশি ও বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অভিযাত্রার গতিপথ ঠিক থাকলে এটি ভারতের তামিলনাড়ুর দিকে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঊর্ধ্ব আকাশের ৮ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকার বায়ু পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়টি বেশিক্ষণ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারবে না। ফলে আজকের মধ্যে এটি দিক পরিবর্তন করতে পারে। দিক পরিবর্তিত হলে এটি উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ অভিমুখে যাত্রা শুরু করতে পারে। আবহাওয়াবিদরা আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চার করে দৈত্যাকার রূপ ধারণ করছে। একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে আবহাওয়ার যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, এর সবই আম্ফানের আছে। এর আগে এটি বেশ অল্প সময়েই লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ এবং নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। শক্তি সঞ্চয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এটি খুবই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মলি¬ক জানান, শুক্রবার দুপুর নাগাদ লঘুচাপটি নিম্নচাপে এবং শনিবার দুপুর নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) প্রথমে ৬ ঘণ্টা পরপর বিজ্ঞপ্তি জারি করছিলো। কিন্তু রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার পরে সংস্থাটি ৩ ঘণ্টা পরপর বিজ্ঞপ্তি জারি করছে। এর আগে দুপুরে ৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটি শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটি কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, কম্পিউটারের মডেল বলছে, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এটি উড়িষ্যার বিশাখাপত্তমের দিকে যেতে পারে। তবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত হিসাবে ঘোরে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র। তাই এত আগে সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে এটুকু বলা যায়, উড়িষ্যা থেকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের দিকেও ধাবিত হতে পারে।তিনি বলেন, সরকার এদিকে নজর রাখছে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে ত্বরিত গতিতে মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে নেয়া এবং এক্ষেত্রে করোনার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী এবং ঘূর্ণিঝড়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রস্তুত করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, এর আগে গত এপ্রিলের শেষে আন্দামান সাগরে আরেকটি আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। তবে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আগেই সাগরে বিলীন হয়ে যায়। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। ‘আম্ফান’ ২০১৯-এর ঘূর্ণিঝড় তালিকার শেষ নাম। ‘নর্দান ইন্ডিয়ান ওশেন সাইক্লোন’-এর নামগুলো আটটি দেশ পর্যায়ক্রমে রাখে। এই পর্যায়ক্রমগুলো হল- বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড। সেই পর্যায়ক্রমে আট নম্বর তালিকায় শেষ নামটি হল আম্ফান। সংস্থাটি ইতোমধ্যে নতুন নামের তালিকা নির্ধারণ করেছে। আম্ফানের পরের ঝড়টির নাম দিয়েছে বাংলাদেশ। সেটি হচ্ছে, নিসর্গ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More