সহাবস্থানের সীমারেখা ও ঈমানের শুদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার:আধুনিকতার উজ্জ্বল আলোয় ঢাকা পড়ে গেছে অনেক প্রাচীন সত্য। আজ দেখা যায়, কেউ কেউ ধর্মীয় সহাবস্থানের নামে এমন এক সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে, যেখানে ঈমানের সীমারেখা মুছে দিতে চাওয়া হচ্ছে।

অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ বা অভিনন্দন জানানোকে অনেকে বলছেন সৌজন্য, কেউ বলছেন আধুনিকতা। অথচ ইসলাম কোনোদিনই সৌজন্যের ছদ্মবেশে ঈমান বিসর্জনের অনুমতি দেয়নি।

আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ঘোষণা স্পষ্ট, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়িদাহ: ৩)

দ্বীন যখন পূর্ণাঙ্গ, তখন তার ভেতরে নতুন কোনো আচার বা উৎসবের স্বীকৃতি দেওয়া মানে পূর্ণতার অস্বীকার।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেছেন, “অমুসলিমদের বিশেষ ধর্মীয় উৎসবে অভিনন্দন জানানো মুসলমানদের জন্য হারাম, এটি তাদের কুফরির প্রতি সন্তুষ্টি ও অনুমোদনের সমতুল্য।”(আহকাম আহলিজ্জিম্মাহ)

ইমাম নববী রহ. এবং অসংখ্য মুজতাহিদ আলেমও এই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

রাসূল সা. হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস ৪০৩১)

ইসলামের দৃষ্টিতে সাদৃশ্য মানে শুধু পোশাক বা রীতি নয়, বরং এমন কথাবার্তা ও আচরণ, যা সরাসরি তাদের ধর্মীয় প্রতীকের স্বীকৃতি দেয়। তাই মুসলমানের জন্য সীমানা স্পষ্ট—মানবিকতায় উদার, কিন্তু ঈমানের প্রশ্নে অটল।

প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি অমুসলিমদের সাথে সৌহার্দ্য থাকবে না? বরং ইসলামই দিয়েছে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

কুরআনে বলছে, “আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না তাদের সাথে সদাচার ও ন্যায়বিচার করতে, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি।” (সূরা আল-মুমতাহিনাহ: ৮)

অর্থাৎ মুসলমান মানবিকতায় সীমাহীন হতে পারে—প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াতে পারে, তাদের হক আদায় করতে পারে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই সৌজন্য কখনোই এমন জায়গায় যাবে না, যেখানে শিরকের বৈধতা মিশে থাকে।

আজ যাদের কণ্ঠে শোনা যায় “সব ধর্ম সমান”, “সব উৎসব সামাজিক” তারা আসলে ইসলামের মূল ভিত্তি তাওহীদকে আঘাত করছেন। ইসলাম কোনো মিশ্রণবাদী দর্শন নয়, ইসলাম একক সত্য।

একজন মুসলমান যখন নিজের ঈমানের শুদ্ধতা রক্ষা করে, তখনই সে প্রকৃত মানবিকতার প্রতিনিধি হয়। কারণ মানবিকতা কেবল হাসিমুখের নাম নয়, মানবিকতা হলো ন্যায়, আর ন্যায় কেবল সেই পথেই সম্ভব, যেখানে সত্য বিকৃত হয় না।

মুসলমানের গৌরব এখানেই সে মানবিকতায় কোমল, কিন্তু ঈমানের প্রশ্নে কঠোর। সভ্যতার নামে আত্মপরিচয় বিসর্জন দেয় না, সৌজন্যের মোড়কে দ্বীন বিক্রি করে না। যে সীমারেখা আল্লাহ টেনে দিয়েছেন, সেটিই তার মর্যাদা, আর সেই সীমা রক্ষার দৃঢ়তাই তার ঈমানের শুদ্ধতার প্রমাণ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More