বায়ু দূষণরোধসহ পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী বর্জণই মূল লক্ষ্য

দামুড়হুদায় চাষ বৃদ্ধির পাশাপাশি পাটের সুদিন ফেরাতে সরকারিভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ
বখতিয়ার হোসেন বকুল: একটা সময় ছিলো যখন পাটই ছিলো দেশের প্রধান অর্থকারী ফসল। পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার পাশাপাশি সরকারি নানা জটিলতায় বার বার লোকসানের মুখে পড়ে পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন চাষিরা। কমতে থাকে পাটের উৎপাদন। বন্ধ হয়ে যায় সরকারি বেসরকারি একাধিক পাটকল। পাটের সেই সুদিন ফেরানোর পাশাপাশি পাটচাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চাষিদের আগ্রহী করতে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে সার ও বীজ। পাটের সুদিন ফেরানোর পাশাপাশি বায়ু দূষণরোধসহ পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমাতেই সরকার বাহাদূরের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান দামুড়হুদা উপজেলার উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম।
তিনি জানান, সোনালী আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বতর্মান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আর সেই নিদের্শনা মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগের পাশাপাশি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাটবীজ ও পাট সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় এ বছর দামুড়হুদা উপজেলায় মোট ২ হাজার পাটচাষিকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এ দুই হাজার পাটচাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। বিএডিসির উৎপাদিত দেশীয় তোষা-৯৮ জাতের পাটবীজ দেয়া হয়েছে। এর প্রধান বৈশিষ্ট হলো তুলনামূলকভাবে লম্বা এবং মোটা আঁশযুক্ত উচ্চফলনশীল। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ২ হাজার চাষিকে প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে। আগামী বছর দ্বিগুন চাষিকে অর্ন্তভুক্ত করার পরিকল্পটনা আছে। সেই সাথে পাটচাষিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উপমহাদেশে পাটচাষ শুরু হয় ১৫৭৫ সাল থেকে। তবে পাটপণ্য ব্যবহারের প্রসার ঘটে ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। ১৯৫০ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত দেশে ৭৭টি জুট মিল গড়ে ওঠে। ওই সময়টাকেই বলা হতো পাটের স্বর্ণযুগ। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্ররে মুখ থুবড়ে পড়ে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট শিল্প। এক সময়ের দেশের শীর্ষ রফতানি খাত পাট শিল্পের এ বেহালদশার জন্য পাট শিল্পের সাথে জড়িত একশ্রেণির অসাধু কর্মর্কতারাও কম দায়ী নয়। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সোনালী আঁশ খ্যাত পাটশিল্পের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কৃষকের ন্যায্যমূল্যের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি পাটের সুদিন আবার ফিরে আসবে। আবারও সম্প্রসারণ হবে পাটের বাজার। পাট এমনই একটি শিল্প যা দেশের অথর্নীতিকে গতিশীল করে। ফলে এ পাটকে আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। পাট শিল্পের সাথে কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও জড়িত। পাট অবশ্যই তার আগের সোনালী দিন ফিরে পাবে। সারাবিশ্ব এখন প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে পাট ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই দিক থেকে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। সরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরের সমন্বিত চেষ্টায় পাট সারাবিশ্বে তার বাজার দখল করবে। একটু সময় লাগলেও পাটশিল্প আবারও তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অবদানই ছিলো সবচেয়ে বেশি। বিদেশে পাট ও পাট দিয়ে তৈরি পন্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মায়ানমার, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ক্যাম্বোডিয়া, ব্রাজিল এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি দেশে পাটের আবাদ হয়। বাণিজ্যিক দিক থেকে বাংলাদেশ এক সময়ে একচেটিয়া সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো এবং ১৯৪৭-৪৮ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে এদেশ থেকে প্রায় ৮০ ভাগ পাট রফতানি হতো। কিন্তু ১৯৭৫-৭৬ সাল নাগাদ এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং বর্তমানে বিশ্ব চাহিদার শতকরা মাত্র ২৫ ভাগ পাট বাংলাদেশ থেকে বাইরে যায়। এ অবনতির বড় কারণ পৃথিবীর অন্যান্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং প্রাচীনকাল থেকেই পাটের চাষ হয়ে আসছে। এক সময়ে এটি বাগানের উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত হতো। তখন এর ব্যবহার ছিলো সীমিত। এর পাতা সবজি ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হতো। পাট বর্ষাকালীন একটি ফসল। দেশের প্রায় সকল জেলাতেই পাট উৎপন্ন হলেও ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, যশোর, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জামালপুর জেলায় পাটচাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে হাতে তৈরি কাপড়, রশি, ও শিকা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া চটের ব্যাগ, টুইল কাপড়, কার্পেট ব্যাকিং, উল-প্যাক, মাদুর, মোটা কাপড় তৈরি হয় পাট থেকেই।
পাটচাষি দামুড়হুদা কেশবপুরের হাবিবুর রহমানের ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর দামুড়হুদা কলেজ মাঠে ১ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন। সরকারিভাবে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া হয়। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার বিশ্বাস জানান, দামুড়হুদা উপজেলায় চলতি মরসুমে পাটচাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ৬ হাজার ২৭১ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫০৪ হেক্টর বেশি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More