চুয়াডাঙ্গায় গম বীজ বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ : নেপথ্যে সিন্ডিকেট

আজ আরো ২০ টন গম ছাড়ের গুঞ্জন : ডিলার ও কৃষকরা হতাশ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় গমের বীজ বিক্রির সিন্ডিকেট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জেলার বিএডিসির প্রসেসিং সেন্টার ও কয়েকজন প্রভাবশালী কন্ট্রাক্টগ্রোয়াস ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ থাকলেও তদারকির অভাবে দিন দিন অনিয়মের মাত্রা আরো বাড়ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও বিদেশে খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এলেও চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকরা ভালো মানের বীজ সরবরাহের অভাবে ফসল উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে অনেকটাই। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শীতের সময় শীত ও গরমের সময় অধিক গরম হওয়ায় সারাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয় তার ৫ ভাগের ১.৫ ভাগ গম উৎপাদন হয় এ জেলায়। আর জেলার কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক অফিসে একই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন থাকায় এমন অনিয়ম করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে জেলার কৃষকরা। বিএডিসির সেলস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চুয়াডাঙ্গার ৪ উপজেলায় ৯৯ জন ডিলারের মাঝে ডিলারপ্রতি ৭০০ কেজি বীজগম বীজ বিক্রির কথা থাকলেও ডিলারপ্রতি বীজ পেয়েছেন ৫০০-৬০০ কেজি। এছাড়া অনেক ডিলার বীজ তুলতে না পারলেও ফুরিয়ে গেছে বিএডিসির চুয়াডাঙ্গা সেলস সেন্টারের সব বীজ। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ডিলার ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার জানান, বিএডিসির চুয়াডাঙ্গা অফিসের অসাধু কয়েকজন অফিসার জেলার প্রভাবশালী ব্যাবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদ ও এনামুল হক লোটাসের যোগসাজশে ১০ টনের অধিক বীজ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই উত্তোলন করে বাইরের জেলায় বিক্রি করেছেন অধিক মূল্যে। এতে চুয়াডাঙ্গায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে গম বীজের। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কৃষক আবুল কাশেম, পিরু ম-ল ও সেলিম বলেন, অধিক ফলনের প্রত্যাশায় আমরা বিএডিসির গমবীজ টাকা দিয়েও কিনতে পারছি না।

এদিকে জেলার সকল ডিলার প্রতি ৭০০ কেজি বীজ দেয়ার কথা থাকলেও দিতে পারছে না বিএডিসি চুয়াডাঙ্গা সেলস সেন্টার। বীজ কারসাজির বিষয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কন্ট্রাক্টগ্রোয়াস ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন ও লোটাস তাদের ৩টি ডিলারের অধীনে সরকার ঘোষিত গমবীজ বিতরণের নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্থাৎ গত ১, ২ ও ৩ নভেম্বর ট্রাকযোগে ১০ টনের অধিক গম চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রসেসিং সেন্টার থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র চড়া দামে বিক্রি করেন। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির বীজ প্রসেসিং সেন্টারের যুগ্ম-পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এখান থেকে বীজ অগ্রিম দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা চাইলে সিসি ক্যামেরা দেখতে পারেন। তবে হ্যাঁ, হেড অফিসের লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী এখান থেকে বাংলাদেশের অনেক জেলায় বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। কাগজ দেখিয়ে যুগ্ম-পরিচালক আরো বলেন, চুয়াডাঙ্গার কোনো ডিলারকে বীজ প্রসেসিং সেন্টার থেকে একটি বীজও দেয়া হয়নি। দীপু এন্টারপ্রাইজকে তো নয়-ই। বীজ বিক্রি আমাদের কাজ নয়, এই কাজটি সেলস সেন্টারের।

যুগ্ম-পরিচালক দেলোয়ার হোসেন গম বীজের সঠিক তথ্য দিতে গিয়ে বলেন, আমার গোডাউনে ২ লাখ ৬০৯ মে. টন গমবীজ স্টক করা ছিলো। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১৩ দশমিক ৫ মে. টন গম বীজ বিতরণ করা হয়েছে। সে হিসেবে এখনো অনেক গম বীজ স্টকে থাকার কথা অথচ তাদের চাহিদার অপ্রতুল ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি বীজ বরাদ্দ পেয়েছেন সাধারণ ডিলাররা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার নামে বিএডিসির চুয়াডাঙ্গায় ৫টি ও মেহেরপুরে ৩টি লাইসেন্স আছে। আমি ৮টা লাইসেন্স থেকে চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রসেসিং সেন্টার থেকে বরাদ্দের কাগজ দেখিয়ে ৮ মে. টন বীজ উত্তোলন করেছি। আমার বিরুদ্ধে বেশি গম বীজ উত্তোলনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

অথচ অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা সিড প্রসেসিং সেন্টার এ বীজ ওই প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীদের যোগসাজশে বিক্রি করে আসছে।

বিএডিসি কুষ্টিয়া অফিসের যুগ্ম-পরিচালক আব্দুর রহমান জানান, বিএডিসি থেকে ১০ টন বীজ গায়েবের বিষয়টি আমি জানি না। যদি কেউ অবৈধভাবে বীজ নেয়ার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ওই সিন্ডিকেটের নামে আজ বুধবার আরো ২০টন গমবীজ ছাড় করা হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। যদি সত্যিই নতুন করে আরো ২০ টন গম বীজ ওই সিন্ডিকেটের নামে ছাড় দেয়া হয় তাহলে চুয়াডাঙ্গার বিএডিসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি চুয়াডাঙ্গার বীজ ডিলার ও সাধারণ কৃষকগণের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More