জীবনের শেষ সম্বল হারিয়ে দিশেহারা বশির উদ্দিন: মানবেতোর জীবন যাপন করছেন পরিবারটি।

বিশেষ প্রতিবেদক:চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার এক দরিদ্র ইজিবাইক চালক বশির উদ্দিন জীবনের একমাত্র সম্বল হারিয়ে আজ নিঃস্ব। যাত্রী বেশে আসা দুর্বৃত্তরা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করে নতুন ইজিবাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এখন মানবতার জীবন যাপন করছে পরিবারটি। দিন আনে দিন খায় অথবা কোনদিন না খেয়ে জীবন চলে তাদের। গত এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ পর্যন্ত একটু উদ্ধার হয়নি আজও।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে। পরে স্থানীয়রা তাকে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

বশির উদ্দিন (৫০) দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত মো. পাঞ্জাব আলীর ছেলে।

অচেতন অবস্থা থেকে সুস্থ হওয়ার পর বশির উদ্দিন জানান,চন্দ্রবাস বাজার থেকে দুইজন অপরিচিত লোক চারশত টাকায় মুজিবনগর কেদারগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া নেয়। পথে তারা দোকান থেকে বিস্কুট কিনে আমাকে খেতে দেয়। আমি অর্ধেক বিস্কুট খাওয়ার পর থেকেই মাথা ঘুরে আসে, এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে শুনেছি, তারা আমার নতুন ইজিবাইক নিয়ে পালিয়েছে।

বিকেলের দিকে এক আত্মীয় তাকে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারকে খবর দেন। পরে স্থানীয়রা মিলে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। তিনি বলেন আজ এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেল আমার ইজি বাইকটি আমি ফিরে পেলাম না। এখন আমার ও আমার পরিবারের কি হবে??

বশির উদ্দিনের ছেলে সজল আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,মাত্র তিন মাস আগে তিনটি এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নতুন ইজিবাইক কিনেছিলাম। মাসে বিশ হাজার টাকা কিস্তি দিই। তিন কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে, এখনো নয়টি বাকি। বাবার সেই ইজিবাইকটাই আমাদের একমাত্র জীবিকা ছিল। এখন আমাদের অনেক বেলা না খেয়ে আমাদের কাটিয়ে দিতে হচ্ছে এখনো পর্যন্ত ইজিবাই একটি উদ্ধার করতে পারেনি। উপার্জনের কোন রাস্তাও নেই, এখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা। গত এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেল ইজিবাইকটি উদ্ধার হলো না। আমার পরিবার কিভাবে চলবে??

স্থানীয় সাবেক মেম্বার আব্দুল হাই বলেন,এই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যাত্রী বেশে এসে চালকদের অজ্ঞান করে তাদের গাড়ি ছিনতাই করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বশির উদ্দিনের মতো গরিব মানুষ এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে তার ইজিবাইক উদ্ধারের জোর দাবি জানাই।

এ বিষয়ে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান,এমন একটি ঘটনার খবর শুনেছি, তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, এলাকাবাসী ও সচেতন মহল চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অসহায় ইজিবাইক চালক বশির উদ্দিনের পরিবারকে মানবিক সহায়তা প্রদান করতে এবং তার হারানো জীবিকার উপায় ফিরিয়ে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।

দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের প্রতি সমাজের বিত্তবান ও সেবাপ্রবণ মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More