ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃজুলাই আন্দোলনে শহীদ আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানিয়েছেন শহীদ পরিবার ও গ্রামবাসীরা।
ঢাকা সিএমএম আদালতের আদেশে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনের কথা থাকলেও পরিবারের আপত্তিতে তা আর হয়নি।
গতকাল সোমবার বেলা ১১ টায় আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে শহীদ মাসুদ রানার সমাধিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল নাঈম লাশ উত্তোলনের জন্য যান। এসময় সঙ্গে ছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব- ইন্সপেক্টর আবুল কালাম, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঢাকা, আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহা: মাসুদুর রহমান পিপিএম, বড়গাংনী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাবর আলী সহ জেলা পুলিশের একটি টিম।পরে লাশ উত্তোলনে পরিবারের আপত্তিতে আপত্তিনামা নিয়ে তারা ফিরে আসেন।
মাসুদ রানার বড় ভাই বাবুল আক্তার জানান, হঠাৎ গত শনিবার আমাদের মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনের কথা জানানো হয়। ১৫ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলনের কথা জানার পর আমরা পারিবারিক ভাবে বসে এবং গ্রামের সম্মানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আমরা লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানিয়ে আপত্তিনামা দেবো।
মাসুদ রানার মা জাহানারা খাতুন বলেন, আমার ছেলে কবরে ঘুমিয়ে আছে তাকে তোমরা আর কস্ট দিয়ো না। অনেক কষ্ট পেয়ে আমার ছেলে মারা গেছে।
এ সময় মাসুদ রানার পিতা, রায়হান আলি বিশ্বাস বাকরুদ্ধ হয়ে উদাসীন ভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলেন।
মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, ছোট সন্তান নিয়ে দোড়া দৌড়ি করা সম্ভব নয়। মিরপুর থানার ওসিকে লাশ উত্তোলনে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। মাসুদ রানার স্ত্রী নিজের হাতে লেখা আপত্তি পত্র জমা দেন।
মাসুদ রানার দুই বোন মমেনা খাতুন ও মাবিনা খাতুন শশুরবাড়ি থেকে কবর স্থানে এসে ভায়ের লাশ তুলতে আপত্তি জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম ( কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এন্ড ইন্টেলিজেন্স,ঢাকা) জানান,
মাসুদ রানার মৃত্যুতে হুসাইন মুহাম্মদ ইমদাদুল হক নামে এক পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে মিরপুর থানায় মামলা করেন।
আড়াই মাস আগে মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকা সিএমএম আদালতে আবেদন করি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে এখানে লাশ উত্তোলনের জন্য আসা।
সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল নাঈম জানান ,চীফ মেট্রোপলিটন আদালতের আদেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে আমি মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনের জন্য আসি। লাশ উত্তোলনে আপত্তিতে পরিবার ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে লাশ উত্তোলনের আপত্তি পত্র জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দিবো তিনি সেইটা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করবেন। এর আলোকে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
মাসুদ রানা একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ছিলেন এবং রাজধানী ঢাকায় একটি লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রাজধানী ঢাকায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির কর্মসূচি চলাকালে মিরপুর-১০ গোল চক্কর এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪রা আগস্ট রাত সোয়া একটার দিকে মৃত্যু বরণ করেন।
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার সকাল ১০টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর মৃতদেহ কয়রাডাঙ্গা গ্রামে আনা হয়। বাদ জোহর গ্রামের কয়রাডাঙ্গা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা সংলগ্ন কবরস্থান তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের রায়হান আলী বিশ্বাস
ও জাহানারা খাতুনের মেজ ছেলে মাসুদ রানা।তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তাঁর আরবি বিনতে মাসুদ নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
তিনি স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করতেন।
ছোট্ট মেয়ে আরবী বিনতে মাসুদ প্রায়শই বাবাকে খুঁজে এবং তার বাবার অনুপস্থিতি বুঝতে শিখেছে। তাঁর স্ত্রী জানান, এই শূন্যতা সামলানো তাঁর জন্য খুবই কঠিন।
মাসুদ রানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।তিনি এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একজন শহীদ হিসেবে গণ্য হন।
						
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.