ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছে শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড: মামুনুল হক

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছে শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড।

২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আওয়ামী লীগের চালানো নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার, শাপলা চত্বরে শহীদ হওয়া আলেম ও মাদ্রাসাছাত্রদের খোঁজখবরসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন দৈনিক যুগান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল গাজালি।

আপনি প্রায় বক্তব্যেই বলেন, ‘প্রয়োজনে আবার শাপলা চত্বরে যাব।’ শাপলা থেকে আপনারা পালিয়ে এসেছিলেন। সেখানে আবার যেতে চান কেন?

জবাবে মামুনুল হক বলেন, শাপলা চত্বর থেকে পালিয়ে আসা কথাটার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই একমত নই। সেদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলি, টিয়ারশেল দিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালায়। গুলির মুখে সেখানে অবস্থান করাটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আর এর কোনো নজিরও ইতিহাসে নেই। সেদিন বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছে, কেউ আহত হয়েছে, কারও চোখ নষ্ট হয়েছে, কারও অঙ্গহানি হয়েছে।

তিনি বলেন, এ হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অস্তিত্বে এমন কলঙ্কের দাগ লেগেছে যা শত-সহস্র বছরেও মুছবে না। বরং এ শাপলা চত্বরই বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছে। ২০১৩ সালের আন্দোলনই ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিপ্লবকে সফল করেছে।

তিনি আরও বলেন, শাপলা আমাদের চেতনার বাতিঘর। যেমনিভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বালাকোটের রণাঙ্গনে বাহ্যিকভাবে মনে হয়েছিল যে, বীর যোদ্ধারা পরাস্ত হয়েছেন। কিন্তু আসলে সেই আত্মদান এবং শাহাদতের মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ভিত শক্ত হয় এবং এক সময় ব্রিটিশরা এদেশ থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়েছিল।

মামুনুল হক বলেন, ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে আমাদের জন্য নতুন এক ‘বালাকোট’ তৈরি করেছে। শাপলা আজ আমাদের চেতনার বাতিঘর। আমরা বিশ্বাস করি, অন্যায়-অবিচার, জুলুম-স্বৈরতন্ত্র কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ শাপলার চেতনা আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে উজ্জীবিত রাখবে। এজন্যই আমরা বলি, শাপলা শুধু একটি দিন বা একটি ঘটনা নয়, এটি একটি প্রতীকী ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে এটি সাহসের প্রতীক। তাই যখনই অন্যায় দেখি, তখনই আমরা শাপলার চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার কথা বলি।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রকাশিত তালিকাটি হেফাজতে ইসলামের প্রণীত বা অনুমোদিত তালিকা নয়। এটি কোনো একজনের ব্যক্তিগত খসড়া-যা গণমাধ্যমে হেফাজতের নামে ভুলভাবে প্রচারিত হয়েছে। আমরা ২০১৩ সাল থেকেই শহীদদের তালিকা প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যায়ে এসে আমার মনে হয়-এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এর অন্যতম কারণ হলো-বহু শহীদের লাশ গুম করা হয়েছে যাদের পরিবার জানেই না যে, তাদের আপনজনের কী হয়েছে, কোথায় গিয়েছে।

তিনি বলেন, এমনও অনেক আছেন, যাদের লাশ গুম হয়নি। কিন্তু ওই সময় নিরাপত্তার কারণে তাদের পরিবার পরিচয় গোপন করেছে। অনেক শহীদের পরিবার অসুখ-বিসুখ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে লাশ দাফন করেছে। আমরা যাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছি, তাদের তথ্য দিয়ে ‘শহীদনামা’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছি। আমাদের অনুসন্ধান এখনো চলমান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More