বাংলদেশে বর্তমান সরকারের আমলে চালু হওয়া নির্বাচনী তামাশায় নতুন নতুন চমক প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। সর্বশেষ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনকে বেশ সক্রিয় দেখা গেল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশে যে নির্বাচনী সংস্কৃতি চালু হয়েছে এটি তার কিছুটা ব্যতিক্রম। আগে আমরা দেখেছি, যত প্রকারের কারচুপি অনিয়ম হয়েছে কমিশন চোখবুজে এড়িয়ে গেছে। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে পুরো কমিশনের দায়িত্ব ছিল প্রত্যেকটি নির্বাচনী তামাশার পর সেটিকে এক স্বচ্ছ সুন্দর নির্বাচন হয়েছে বলে সাফাই গাওয়া। দিনদুপুরে যে জালিয়াতি ও ভোটডাকাতি হয়েছে সেটিকে বেমালুম চেপে যাওয়া। এবার দেখা গেল সকাল থেকে নির্বাচন কমিশন একেকটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করছে। দুপুরের পর এসে পুরো উপনির্বাচন বাতিল করে দিলো। এর মাধ্যমে কমিশন তার বৈধ ক্ষমতা চর্চার রিহার্সেল দেখালেও জনগণ এখনো তাদের কার্যক্রমকে দেখছে সন্দেহের দৃষ্টিতে।
ভোটের দিন কমিশনকে দেখা গেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন থেকে সিসি ক্যামেরায় গাইবান্ধার ভোট পর্যবেক্ষণ করতে। তারা দেখতে পান, ভোট দেয়ার গোপন কক্ষে একসাথে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করে এক জনের ভোট অন্য জনে দিয়ে দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন অন্য সব প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছেন। প্রথমে সকালে অনিয়মের কারণে তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে ইসি। এরপর দুই দফায় ১৬টি ও ১২টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়। দুপুর নাগাদ মোট ১৪৫টির মধ্যে ৫০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়। বেলা ২টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে আলাপ-আলোচনা করে পুরো ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইসির বক্তব্য হলো- ‘ভোট গ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’। যারা অনিয়ম ও জবরদস্তি করছেন তাদের ‘ডাকাত’ বলেও সম্বোধন করেছে কমিশন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া বাকি চার প্রতিন্দ্বদ্ব) দাবি করেন, সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলে অনিয়মও শুরু হয়। বেলা ১১টায় এসে চার প্রার্থী একজোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনারদের পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নির্বাচন বর্জনকারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাড়তি অভিযোগ ছিল, ভোটের আগের রাতে তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। এর আগে থেকেই তাদের ওপর পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে। সর্বশেষ ভোটের দিন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। কমিশনাররা ঢাকায় বসে যা দেখেছেন এবং প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন; এগুলো নতুন কিছু নয়। নতুন হচ্ছে- নির্বাচন কমিশনের উৎসাহের সাথে এগুলো আমলে নিয়ে ভোট বাতিল করা। আগের কমিশনের সাথে এই কমিশনের এতটুকু পার্থক্য। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আরো বহুদূর অগ্রসর হতে হবে।
বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হলে যারা নির্বাচনী অপরাধ সংঘটিত করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে এসব অপরাধীকে সুনির্দিষ্ট সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা কতটুকু। ইসি সিসি টিভিতে যেসব অপরাধীকে শনাক্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া বিরোধী প্রার্থীরা আরো গুরুতর যেসব অভিযোগ করেছেন, সেসব ব্যাপারেই বা কী ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর ওপর নির্বাচন কমিশনের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। এতদিন সংস্থাটি নিজেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলেছে। এবার বৈধ অধিকার কিছুটা চর্চা করেছে। সেটি কেন করা হলো তাও আগামীতে স্পষ্ট হবে। আমরা আশা করব, ইসি যদি দোষীদের বিচারের আওতায় না আনতে পারে তাহলে যেন সেটি পরিষ্কার করে বলে, যাতে করে রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ করণীয় নির্ধারণ করতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া।