সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে বিএনপিসহ রাজনেতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, এটি আশাব্যঞ্জক। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এ নিয়ে দলগুলো একমত পোষণ করেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি অতিরিক্ত লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে সংসদ-সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন বিষয়ে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ-সদস্যদের স্বাধীনতার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। অবশ্য মঙ্গলবারের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেয়নি। তবে এর আগে কমিশনের বৈঠকে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রশ্নে দলটি একই মত দিয়েছিলো।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ-সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। সেখানে বলা আছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসাবে কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। এ অনুচ্ছেদের সমালোচনায় বলা হয়ে থাকে, এর মাধ্যমে ব্যক্তিচিন্তা বা ব্যক্তিগত মতকে অস্বীকার করা হয়। আবার এ অনুচ্ছেদ না থাকলে সংসদে ‘হর্স ট্রেডিং’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলা বাহুল্য, হর্স ট্রেডিংয়ের সুযোগ থাকলে সরকারের স্থায়িত্ব হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত এ বিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাব ছিলো, অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন প্রশ্নে আলোচনা হয়। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আস্থা ভোট না থাকলে সরকার পরিচালনায় স্থায়িত্ব থাকবে না, প্রতিনিয়ত সরকার পরিবর্তন হতে থাকবে। আস্থা ভোট, অর্থবিল এবং সংবিধান সংশোধন ছাড়া সংসদ-সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রদান করবেন, এ বিষয়ে বিএনপি একমত। তবে দলটি এতে জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। এর বাইরে সব বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন সংসদ-সদস্যরা। অন্যদিকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে সংসদ-সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। আর এনসিপি মত দিয়েছিলো, অর্থবিলের পাশাপাশি আস্থা ভোট থাকতে হবে, কারণ সংসদ-সদস্যদের স্বাধীনতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার সরকারের স্থিতিশীলতা। কাজেই দেখা যাচ্ছে, ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি। এ বিষয়ে একরকম ঐকমত্য রয়েছে। আর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.