ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ট্রেন, বাস ও লঞ্চে ঘরমুখো যাত্রীর চাপ বেড়েছে। দুর্ভোগ বাড়তে পারে-এমন আশঙ্কায় বহু মানুষ আগেভাগেই রাজধানী ছাড়ছেন। জানা যায়, এখন পর্যন্ত সড়ক ও নৌপথে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছেন মানুষ। তবে রেলযাত্রায় বিলম্ব লক্ষ করা যাচ্ছে। অবশ্য বৃষ্টি ও ঢাকামুখী পশুবাহী গাড়ির কারণে সড়কে ঈদযাত্রা কিছুটা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে এতদিন যাত্রীদের চাপ না থাকলেও ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, পরিস্থিতির ততই পরিবর্তন হচ্ছে। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছর ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অতীতে লক্ষ্য করা গেছে, ঈদযাত্রায় যানজটের কারণে যাত্রীদের দীর্ঘসময় মহাসড়কে আটকে থাকতে হয়েছে। এবার যেন তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবে। বরাবরের মতো এবারও যাত্রী পরিবহণকারী সংস্থাগুলো আগাম টিকিট বিক্রি করেছে। অবশ্য অতীতে সড়ক ও নৌপথে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বারবার। ঈদকে কেন্দ্র করে এবার কোনো পরিবহণ কোম্পানি যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। অনিয়ম দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার নেওয়া হবে, কর্তৃপক্ষের তরফে এমন ঘোষণা প্রদানই যথেষ্ট নয়; তা বাস্তবায়নে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়।
অভিজ্ঞতা বলে, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে যেসব কর্তৃপক্ষ কাজ করে থাকে, ঈদের আগে তারা কিছুটা তৎপর হলেও ধীরে ধীরে তাদের এ তৎপরতায় কিছুটা ভাটা পড়ে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। অনেক সময় যাত্রীরাও চালককে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করে। আবার পরিবহণ মালিকের চাপের কারণেও চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। বাড়তি অর্থের আশায় প্রয়োজনীয় বিশ্রামটুকুও নেন না। ফলে চালকের ক্লান্তিও সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব ক্ষেত্রে পরিবহণ মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যারা পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের বুঝতে হবে, এটি সেবামূলক কাজ। অতি মুনাফার লোভে অন্যের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা রীতিমতো অপরাধ। ঘরমুখো মানুষ চান বাড়িতে গিয়ে ঈদ উৎসবকে আপনজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে। তবে তা করতে গিয়ে অসচেতনতা আর মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা সুবিবেচনার কাজ নয়। অন্যদিকে ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, গামছা পার্টি-এসব চক্রের তৎপরতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাবারের মধ্যে নেশাজাতীয় বা চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে যাত্রীদের অজ্ঞান করে অর্থসহ সবকিছু হাতিয়ে নেয়। এসব চক্রের তৎপরতা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাবে। সড়ক ও নৌ-কোনো পথেই যাতে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করতে না পারে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশা, অনিয়মগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের মাধ্যমে যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More