ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় উদ্যোগ জরুরি

ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। এ ধরনের ভূমিকম্পের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। সম্প্রতি আবারও ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয় সামনে আসছে-যা আমলে নেয়া জরুরি। ভূপৃষ্ঠের গভীরে টেকটোনিক প্লেটগুলো আগের তুলনায় বেশি সরছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। তাদের ভাষ্য, ইন্ডিয়ান প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মিজ প্লেট পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে, সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে তাতে আট মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হতে পারে। আর এই মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে। আর এ ঝুঁকিকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এছাড়া বড় ধরনের ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেই আশঙ্কার বিষয়ও এড়ানো যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসারে উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, ইন্ডিয়ান পেস্নট এবং দক্ষিণে বার্মিজ সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে আছে দেশ। ভূমিকম্পে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোনা ও দিনাজপুর অঞ্চলই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা যায়। ফলে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ৫ মার্চ বুধবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে উঠে ভূমিকম্পে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫ দশমিক ৬। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের ইয়ারিপক এলাকা। ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার। এছাড়া, মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে একটির পর একটি স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনের আঘাত ইঙ্গিত করে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আরও শঙ্কার বিষয় হলো, কোনো পূর্বাভাসের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী, ১০ দিনে চার দফা ছোট থেকে মাঝারি আকারের যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, প্রায় প্রতিটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশপাশে।
বলা দরকার, ২০২৩ সালে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। এ ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি পেস্নট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত ৬৩ বার ভূমিকম্প হয়েছে। ছোট ছোট এসব ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের ইঙ্গিত উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা সিলেট অঞ্চলকে আগেই ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে বিজ্ঞানীদের মতে বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে একই মানের আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। দেশে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিলো ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে। এছাড়া, ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে। সে হিসাবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকট।
সর্বোপরি, ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ এটা সহজ করে দেখা যাবে না। ভূমিকম্পের মাত্রা কম হলেও এর পরিণতি হতে পারে বড়, তাই নাগরিকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভূমিকম্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, টকশোতে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। জাতীয় বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি সংস্থা ও বিভাগে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More