শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ জরুরি

ইরান-ইসরাইল সংঘাত তীব্রতর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে এ সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা গোটা উপসাগরীয় অঞ্চল, এমনকি এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ভেবে মানুষ আতঙ্কিত। এমন তথ্যও রয়েছে, ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ইরানে সম্ভাব্য সামরিক হামলার পরিকল্পনায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। একইসঙ্গে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক দিনে ৩০টিরও বেশি মার্কিন সামরিক বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের বিভিন্ন ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে। আর দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানো হয়েছে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী। এ প্রেক্ষাপটে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ও রাশিয়া জানিয়েছে কঠোর প্রতিক্রিয়া। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্ব চলবে।’ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরাইলি ও মার্কিন হুমকির বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘এমনকি এর সম্ভাবনা নিয়েও আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’ কাজেই ধারণা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সরাসরি হামলা চালালে চীন ও রাশিয়াও নীরব থাকবে না। সেক্ষেত্রে ইরান-ইসরাইল সংঘাত বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বস্তুত একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা এ অঞ্চলের কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে রয়েছে মার্কিন ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালালে ইরানও ওইসব দেশের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে এ যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেবে, এমনকি পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া এ যুদ্ধের অর্থনৈতিক অভিঘাতও হবে অকল্পনীয়। বিশ্বের অধিকাংশ জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য, যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রপথ দিয়ে সরবরাহ করা হয়, যার অন্যতম হলো হরমুজ প্রণালী। এই প্রণালী ইরানকে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আলাদা করে এবং আরব সাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এটি বিশ্বের সমুদ্রপথে তেলের এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহের পথ। ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কারণে যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে বাড়বে উৎপাদন খরচও, যার পরিণতি শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদের ওপর পড়বে। সংঘাত চলতে থাকলে তেল আমদানিকারক দেশগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের মতো যেসব দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি কর্মরত, সেসব দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কাজেই ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান জরুরি। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। জাতিসংঘ, ওআইসি, আরব লীগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্বে একটি সর্বব্যাপী সংঘাত, রক্তপাত ও ধ্বংস এড়াতে সংশ্লিষ্ট সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে, এটাই কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More