স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভবনগরে বিচরণ করা কালোমুখো হনুমানগুলো চরম খাদ্যসঙ্কটে পড়েছে। ক্ষুধার্ত হনুমানগুলো খাদ্যের সন্ধানে ফসলের জমি ও মানুষের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। ফসল ও গাছের ফলমূলের ক্ষতি করছে।
গ্রামবাসী জানায়, কালোমুখো হনুমান ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে বসবাস করছে। আগে গ্রামটি বনজঙ্গল ও গাছপালায় পরিপূর্ণ ছিলো। তখন তাদের খাবারের অভাব ছিলো না। দিনে দিনে গ্রামে গাছপালা ও বনজঙ্গল কমে গেছে। এতে হনুমানদের আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে পড়েছে। খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। হনুমানের বংশ বৃদ্ধিও হচ্ছে। গ্রামবাসীর তথ্যমতে ভবনগরে বর্তমানে প্রায় ২০০ হনুমান আছে। বুড়া বাচ্চা সব বয়সের হনুমান আছে। দেখা যায়, কোন কোনটি গর্ভবতী, আবার কোনটি বুকে ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে গাছে গাছে ঘুরছে। কেউ খাবার নিয়ে গেলে এগিয়ে আসে। হাত থেকে খাবার নেয়। দৌড়াদৌড়ি করে। দেখতে আনন্দ লাগে। গ্রামবাসী জানায়, ক্ষুধার তাড়নায় খেতের ভুট্টা, বাগানের পেয়ারা ও আমের গুটির ক্ষতি করছে। তখন চাষিরা তাদের তাড়া করে। অনেক সময় হনুমান গ্রামে বিদ্যুতের তারে বিদ্যুতস্পৃষ্টে মারাও যায়। মাঝেমধ্যে পিটিয়ে হনুমান হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। তবে বর্তমানে হনুমানগুলোকে বিরক্ত করে না। বাড়িতে গেলে খাবারও দেয়। খাবারের সন্ধানে হনুমানগুলো পার্শ্ববর্তী শ্রীনাথপুর, অনন্তপুর, কুসুমপুর ও গুড়দাহ গ্রামে যায়। আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসে। দলছুট কিছু হনুমান কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও শৈলকুপায় খাদ্যের সন্ধানে গেছে। তাদের বাড়ির ছাদে ও গাছে দেখা যায়।
গ্রামবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন বলেন, বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ গ্রামে হনুমানের বাস। আগে সংখ্যা বেশি ছিলো। এখন কমে গেছে। এখন তারা খাবারের জন্য খেতের ফসল ও ফলমূলের ক্ষতি করছে। খাবারের জন্য বাড়ি আসে। কেউ খাবার দেয়, আবার কেউ তাড়িয়ে দেয়। হনুমানগুলোকে নিয়মিত খাবার দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, মহেশপুর উপজেলার ভবনগর ও আশপাশের গ্রামে প্রায় ২০০ হনুমানের বিচরণ আছে। আগে বনজঙ্গলে ভরা ছিলো। হনুমান বন থেকে খাবার পেতো। বনজঙ্গল কেটে ফেলায় তাদের খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী ভবনগর পরিদর্শন করে গেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে হনুমানদের খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।