নতুন গণমাধ্যমের অনুমোদন: বর্তমান সরকারের নীতিমালা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার:তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, দেশের নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের গণমাধ্যম নীতিমালার অংশ হিসেবে এসেছে, যেখানে কোনও বিদ্যমান গণমাধ্যম বন্ধ করার পরিকল্পনা নেই বরং নতুন চ্যানেল ও মাধ্যমের পথ প্রশস্ত করা হবে।

নতুন গণমাধ্যম খোলার সুযোগ ও সরকারের স্থিতি

বুধবার বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহফুজ আলম বলেন, “আমাদের নীতি হলো কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করা হবে না। যেহেতু বিদ্যমান গণমাধ্যম বন্ধ হচ্ছে না, তাই নতুন গণমাধ্যমের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এটি আগের নিয়ম অনুযায়ী হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি নতুন আইনের আওতায় অনুমতি দেওয়া যেত, তাহলে সেটা আরও ভালো হতো, কিন্তু নতুন আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সরকার আমলে নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।”

এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বর্তমান প্রশাসন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিস্তারকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যদিও আইনি কাঠামোর অভাবে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের সংবাদ পরিবেশে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, যা পাঠক ও দর্শকদের জন্য তথ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।

নতুন অনুমোদিত টিভি চ্যানেল: নেক্সট টিভি ও লাইভ টিভি

অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে দুটি নতুন বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে, যা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আগের প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। এই দুটি চ্যানেলের নাম ‘নেক্সট টিভি’ ও ‘লাইভ টিভি’।

– **নেক্সট টিভি**: ২৪ জুন অনুমোদন পাওয়া এই চ্যানেলের মালিকানা রয়েছে ‘৩৬ মিডিয়া লিমিটেড’-এর হাতে, যার ঠিকানা পুরান ঢাকার করাতিটোলা লেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুর রহমান তুহিন, যিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক।

– **লাইভ টিভি**: ১৪ জুলাই অনুমোদিত এই চ্যানেলের মালিক ‘মিনার্ভা মিডিয়া লিমিটেড’, যার ঠিকানা গুলশান-১। এর মালিক আরিফুর রহমান জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক সদস্য হলেও এনসিপি-তে যোগ দেননি।

দুটি চ্যানেলের পরিচালনায় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়, যা দেশের গণমাধ্যম জগতে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।

দেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট অনুমোদিত বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে ৫০টি, এর মধ্যে পূর্ণ সম্প্রচারে রয়েছে ৩৬টি। বাকি ১৪টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া অনুমোদিত আইপি টিভি সংখ্যা ১৫টি। নতুন চ্যানেল ও আইপি টিভি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও আবেদন রয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল চালানোর জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন প্রক্রিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি সনদ, প্রকল্প প্রস্তাব এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয়।

অনুমোদন প্রক্রিয়া ও সরকারি তদারকি

অ্যাপ্লিকেশন জমা হওয়ার পর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। বেসরকারি টিভি লাইসেন্স পেলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ফ্রিকোয়েন্সি ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়, যা সরকারের ‘সবুজ সংকেত’ হিসেবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করে যে, নতুন চ্যানেল সরকারি নিয়মবিধি মেনে পরিচালিত হবে এবং দেশের টেলিযোগাযোগ নীতিমালা অনুসরণ করবে।

বিশ্লেষণ: গণমাধ্যমের বহুমাত্রিক বিকাশ ও এর প্রভাব

নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেশের সংবাদ পরিবেশে আরও বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতা আনবে। প্রতিযোগিতার ফলে সংবাদ পরিবেশে মান উন্নয়ন এবং তথ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে, যা নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে কিছু চ্যানেলের মালিকানায় দ্বন্দ্ব ও আগ্রহের বিষয় দেখা যায়, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত কঠোরভাবে নিয়মকানুন প্রয়োগ করা এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।

বর্তমান সময়ে তথ্যের দ্রুত প্রবাহ ও সঠিক সংবাদ পাওয়া অপরিহার্য। নতুন গণমাধ্যমের অনুমতি দেশের মানুষকে আরও বৈচিত্র্যময় তথ্য সরবরাহ করবে এবং তথ্যের গুণগত মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। একদিকে এটি গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও গতিশীল হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More