ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন এনসিপির

স্টাফ রিপোর্টার: দল গঠনের চার মাস পর এসে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দলীয় কাঠামো এবং গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ করে গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে আবেদন জমা দেয় দলটি। নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার পর দলটির নেতারা জানিয়েছেন নিজেদের দলের প্রতীক হিসেবে তারা ‘শাপলা’ বরাদ্দ চেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া দলটির গঠনতন্ত্র থেকে জানা গেছে এনসিপি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে তিন স্তরবিশিষ্ট দলীয় কাঠামো, সরকার ও দলের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য, ওয়েস্টমিনিস্টার আদলে ছায়া মন্ত্রিসভা ও সকলক্ষেত্রে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেয়ার পর এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা আরপিও অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের শর্তগুলো পূরণ করে নিবন্ধনের আবেদন দাখিল করেছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের আবেদন রিসিভ করেছেন। সেটার রিসিভ কপি তারা দিয়েছেন।’ আখতার বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতীক হিসেবে আমরা তিনটি প্রতীকের কথা উল্লেখ করেছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো তারা আমাদের দলের প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ দেবে।’ এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘পার্লামেন্ট এখন খালি রয়েছে। এই পার্লামেন্টে আগামীতে সংস্কার বা ঐকমত্য কমিশনের ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন এনসিপির ঘরে থাকবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলীয় প্রতীকের ক্ষেত্রে শাপলাকে প্রাথমিক দিয়েছি। দ্বিতীয় প্রতীক হিসেবে রেখেছি কলম। তৃতীয় মোবাইল। তবে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এবং দেশবাসীর কাছে আবেদন রাখব আমাদের যাতে শাপলা মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং শাপলা মার্কার মাধ্যমেই জনগণ তাদের সরকার গঠন করে।’
এনসিপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যদি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এনসিপি সরকার গঠন করে, তাহলে দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রাখা হবে। সরকারের দায়িত্বে গেলে দলীয় প্রধানকে পদ ছাড়তে হবে। দলের জাতীয় পরিষদের ১০ শতাংশ সদস্য যদি দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্তের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেন, তাহলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রাজনৈতিক পরিষদ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। দলের রাজনৈতিক পরিষদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই পরিষদ হবে নির্বাচিত। দলটির কাঠামো হবে বহুস্তরবিশিষ্ট। জাতীয় পরিষদ বা সাধারণ পরিষদে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব স্তরের সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া দলের তিন স্তরবিশিষ্ট আঞ্চলিক কাঠামো থাকবে। ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের মতো করে এনসিপি একটি দলীয় পরামর্শক প্যানেল ও শ্যাডো ক্যাবিনেট (ছায়া মন্ত্রিসভা) গঠন করবে। ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রণালয়গুলোর মতোই দায়িত্ব পালন করবেন। তারা নীতি বিশ্লেষণ করবেন এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে শাসনব্যবস্থার জন্য বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। এনসিপির গঠনতন্ত্রে দলের প্রস্তাবনা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪- এই তিন ঐতিহাসিক ঘটনার সমন্বয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠন করতে চায় এনসিপি। তাদের লক্ষ্য, দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি তারুণ্যনির্ভর বিকেন্দ্রীভূত গভর্ন্যান্সের (শাসন) মাধ্যমে তারা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে চায়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে কেউ দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। দলীয় প্রধানকে তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। গঠনতন্ত্রে যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের কথা বলেছে, এর জন্য সব ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে তারা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, এনসিপি একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ নাগরিকভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে, যেটি হবে দুর্নীতি ও অপব্যয়মুক্ত। সব ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে গঠনতন্ত্রে। এ ছাড়া সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে চায় এনসিপি।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More