কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করে বাজেট অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার: বাড়তি কর দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা এবং ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে স্বাভাবিক করের চেয়ে পাঁচ গুণ কর দিয়ে এই সুবিধা রাখা হয়েছিল। চূড়ান্ত অনুমোদনে সেটি বাতিল করা হয়েছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রস্তাবিত বাজেট থেকে চূড়ান্ত বাজেটে কী পরিবর্তন আনা হলো সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি। এ সময় আরও বক্তব্য দেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং এনবিআর চেয়ারম্যন মো. আব্দুর রহমান খান। এ সময় জানানো হয়, রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার সুযোগ আরও ছয় মাস পাওয়া যাবে। জুলাই থেকে এটি তুলে দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেটি জানুয়ারিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ বিশেষ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্থনীতি খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। অনেকেই বলছেন, কারো সঙ্গে আলোচনা হয়নি, আমাদের পারফরমেন্স দুর্বল। তবে এক বাজেটে সব করে ফেলতে পারব সেটা ঠিক নয়। আমরা অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মতামত নিয়েছে। তিনি জানান, প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু পরিবর্তন করে বাজেট পাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরেছি। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে অপ্রদর্শিত অর্থ কারো কাছে থাকতে পারে। সব অপ্রদর্শিত অর্থ কালোটাকা নয়। ভবন, ফ্ল্যাটে এজন্য সুযোগ রাখা হয়েছিল। এই খাতের সঙ্গে অনেকেই জড়িত। তবে চূড়ান্ত বাজেটে সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়তি কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ ভবন নির্মাণে, ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ ছিল। বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে জমি রেজিস্ট্রেশনে বিভিন্ন স্তরের কর কমানো হয়েছে। তিনি জানান, আগের মতো নিয়মিত করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ কর নথিতে দেখানো যাবে, এটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, আগেও ছিল। এর আগে গতকাল সকালে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত ২ জুন সোমবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয় নতুন বাজেট। প্রস্তাবিত এ বাজেটের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত ১৯ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের থেকে মতামত গ্রহণ করে। অর্থসচিব জানান, এবার প্রস্তাবিত বাজেটে চার শতাধিক সুপারিশ এসেছে। বেশির ভাগ এসেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে। আগামী জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ বিশেষ ভাতা বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের নিট পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৮ টাকা বা তার বেশি তারা পেনশনের ১০ শতাংশ বিশেষ ভাতা হিসেবে পাবেন। আর যাদের নিট পেনশন এ পরিমাণের কম তারা পাবেন ১৫ শতাংশ বিশেষ ভাতা। বিশেষ ভাতা বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আলাদা আদেশ জারি করবে সরকার। এর আগে গত ৩ জুন সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেতন গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ৯ পর্যন্ত চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ওপর ১০ শতাংশ ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন। আর গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা পাবেন ১৫ শতাংশ হারে। কর্মরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ বিশেষ সুবিধার ন্যূনতম পরিমাণ এক হাজার টাকা, আর পেনশনভোগীদের ন্যূনতম ৫০০ টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। গতকাল অর্থ উপদেষ্টা জানান, বিশেষ সুবিধার ন্যূনতম পরিমাণ হবে দেড় হাজার টাকা। পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। বাজেট ছোট করার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা মেগা প্রকল্প নেইনি। যেগুলো রয়েছে সেগুলো চলমান প্রকল্প। হঠাৎ করে উন্নয়ন বাজেট কমিয়ে দিলে সেটি কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যও কমে যেতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে দেশের বাইরের বাংলাদেশিরাও সেখানে অর্থ জমা রাখে। এ বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে, আমরা সিরিয়াসলি বিষয়টি দেখছি।
বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শন-সংক্রান্ত বিধান বিলোপ করা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) বা ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে উক্ত আয়ের ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সকল প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে উক্ত করহার ২০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যান্য সব পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সকল প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে উক্ত করহার ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট হতে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পার্লারের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বল পয়েন্টও (কলম) এর আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More