পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে সারাদেশে গ্রেফতার এক হাজার ৭৮৩ জন নাশকতা মামলায় চুয়াডাঙ্গায় ৭ ও মেহেরপুরে আ.লীগের ৬ নেতা গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট এক হাজার ৭৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এক হাজার ৬৯ জন এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ৭১৪ জন রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পুলিশ একযোগে অভিযান পরিচালনা করে এক হাজার ৭৮৩জনকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তিনটি ম্যাগাজিন, দুইটি কার্তুজ, ৫ রাউন্ড গুলি এবং একটি বার্মিজ চাকু জব্দ করা হয়েছে। এ অভিযানে চুয়াডাঙ্গায় ২ জন, আলমডাঙ্গায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুজন ও জীবননগরে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও মেহেরপুরে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদপাড়ার আবু বক্কর আরিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সদর থানা তাকে গ্রেফতার করে। আবু বক্কর আরিফ (৫৩) চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় মসজিদপাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে। এছাড়াও জোয়ার্দ্দার পাড়ার জাহিদ হোসেন শান্তকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত শান্ত ওই এলাকার আজমল ঝড়–র ছেলে। গ্রেফতার দুজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী মামলাসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মাস্টারসহ ২ আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে। ১৯ জুলাই শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। তাদেরকে ২০২৩ সালে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বোমা হামলা মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার আব্দুল হান্নান মাস্টার (৪৪) জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেদবাড়ীয়া গ্রামের শাহাদত আলীর ছেলে। লিয়াকত আলী (৫০) হারদী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কোয়াতলা গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে। আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান (পিপিএম)’র নেতৃত্বে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল রবিবার তাদেরকে সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষিত ইউনিয়ন পদযাত্রার কর্মসূচি থাকায় মহাসিন আলীসহ ৩০/৪০ জন বিএনপি নেতাকর্মী পদযাত্রায় অংশ গ্রহণের জন্য যাচ্ছিলেন। খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামের হায়দার মোড়ে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারপিট করে ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। ৫টি মোটরসাইকেল কেড়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মহাসীন আলী বাদী হয়ে ৯ নভেম্বর রাতে ৪২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫০/৬০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকে আটক করেছে। শনিবার দিনগত রাতে জীবননগর থানার বাঁকা ও হাসাদাহ ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন-বাঁকা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রতাপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. মিন্টু (৪৫), একই গ্রামের মৃত শহর আলী মন্ডলের ছেলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু তালেব (৫৮) ও হাসাদাহ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে শুকুর আলী (৫৪)। আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় রাজনৈতিক মামলা রয়েছে।
জীবননগর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস জানান, হরতালকে কেন্দ্র করে নাশকতা ঠেকাতে আমরা তিনজন পদধারী আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করেছি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক মামলায় তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা থাকায় জেলার তিনটি থানায় পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৬জন নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এসব নেতা ও কর্মীদের আটক করে। মেহেরপুর সদর থানায় একজন, মুজিবনগর থানায় একজন ও গাংনী থানায় ৪ জন। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে-শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, গাংনী তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগ, আল মামুন, সভাপতি, ওয়ার্ড কৃষকলীগ, গাংনী তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন, আসাদুল হক, দপ্তর সম্পাদক, গাংনী রাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, আবুল বাশার, আওয়ামী লীগ নেতা, মেহেরপুর, অঙ্কুর হোসেন, মেহেরপুর শহরের আওয়ামী লীগ, শেখ আবু সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক, মুজিবনগরের মোনাখালি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, মেহেরপুরে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা থাকায় গ্রেফতারকৃতদের রোববার তাদেরকে আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.