মেহেরপুর জেলা বিএনপিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব চরমে মাসুদ অরুণ-কামরুল গ্রুপের পালটাপালটি অবস্থানে পরিস্থিতি ঘোলাটে
স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর জেলা বিএনপিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। আহ্বায়ক অ্যাড. কামরুল ইসলাম ও সদস্য সাবেক সংসদ-সদস্য মাসুদ অরুণের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় পালটাপালটি অভিযোগ, বিবৃতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়ি পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলছে। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম নিয়ে মাসুদ অরুণপন্থি নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। তারা আহ্বায়ক কমিটিকে মেনে নিতে পারেননি। কমিটি পুনর্গঠনে মিছিল, মিটিং, বিভিন্ন কমিটি গঠনে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে বলে আহ্বায়ক কমিটির অভিযোগ। অন্যদিকে কামরুলপন্থিরা মাসুদ অরুণের অনুসারীদের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন। মেহেরপুর জেলা শহরের দুটি স্থানে দুটি অফিস জেলা বিএনপির দুপক্ষের। বোসপাড়ায় একটি ভাড়াবাড়িতে সাবেক এমপি মাসুদ অরুণের পক্ষে আর অপরটি মুখার্জিপাড়ায় আহ্বায়ক কমিটির মিল্টন-কামরুলের পক্ষে। এ দুপক্ষের দুটি অফিস থাকায় যতোটা না বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিলো তারচেয়ে বেশি প্রকাশ হয়েছে উভয়পক্ষ অপরপক্ষের বিরুদ্ধে সমাবেশ, মিছিল করাতে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কর্মীদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। বিএনপির রাজনীতি সচেতন কয়েকজন বলছেন, এ বিরোধের দায় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার। কেন্দ্রীয়ভাবে দলের ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। উভয়পক্ষের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্য খুবই জরুরি। জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমান আন্দোলনে এমন কোন্দল সংগঠনকে আরও দুর্বল করছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির কয়েক নেতা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। কর্মীদের দাবি, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। দলীয় নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি এ সংকট দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে আগামী দিনের আন্দোলন, নির্বাচন বা সাংগঠনিক কার্যক্রমে মেহেরপুর বিএনপি বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে পারে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমপি মাসুদ অরুণ বলেন, নতুন কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হাসান হোটেল আটলান্টিকে নারী কেলেঙ্কারি মামলার আসামি। কোনো দিনই রাজনীতির মাঠে তাকে কোনো কর্মসূচিতে পাননি নেতাকর্মীরা। আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন গাংনী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। ঢাকায় প্রিন্টিং ব্যবসায়ী। শুক্রবার কেন্দ্রিক তিনি স্থানীয় নেতা। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হাসান বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অভিযোগ করেন, মাসুদ অরুণের রাজনীতিতে ছাত্রমৈত্রীর গন্ধ রয়েছে। মেহেরপুর জেলায় ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক মাসুদ অরুণ বেশ কয়েক বছর ওয়ার্কার্স পার্টি করার পর বিএনপিতে যোগ দেন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী মাসুদ অরুণ ও তার সহোদর মারুফ আহমেদ বিজনের ভূমিকা বিএনপির রাজনীতিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে, যা কেন্দ্রীয় নেতারা জেনেবুঝেই নতুন কমিটিতে মাসুদ অরুণকে সদস্য করেছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন দলের বিভেদ অস্বীকার করে বলেন, মাসুদ অরুণ প্রতিপক্ষ। তিনি তাদের কর্মসূচিতে আসেন না। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করা মানে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। এটা রাজনীতির অংশ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.