মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলা জজ আদালত ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতেই একটি বিচারিক আদালতের সামনের করিডোরে দেখা গেল উপচে পড়া বিচার প্রার্থীদের ভিড়। সাধারণত বড় কোনো মামলার রায়ের দিনে এমন ভিড় দেখা যায়। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে সরজমিনে আদালতের বিচার কার্যক্রম দেখতে যেয়ে এর কারণ জানতে চাইলে পঞ্চাশোর্ধ্ব আমিনা হালসোনা নামের এক নারী জানান, আমার ১০ বচর আগির কেচ। কতবার সাক্ষী এইনিচি, ঘোরৎ দিচে। ইবার ৩ জন সাক্ষী এইনিচি, ঘোরৎ দেয়নি। সবার সাক্ষি নিইচে। ইবার আমার কেচ শেষ হবে। এ সময় আদালতের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বসে আছেন। দরজায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, আজ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন মামলার সরকারি সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। এভাবে চলছিল মেহেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলীর আদালতের কার্যক্রম। আদালত চত্বরে আইনজীবীদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে দৌড়ঝাঁপ। অধিকাংশের গন্তব্যই ছিল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দিকে।
আইনজীবী আল মামুন অনল জানান, চিফ স্যার সাক্ষ্য নিতে খুব সিরিয়াস। কষ্ট করে বিচার প্রার্থীরা সাক্ষি হাজির করেন। তাদেরও সময়ের দাম আছে। বিচার প্রার্থী ও সাক্ষীদের যেন ঘুরে যেতে না হয় সেইভাবে তিনি যত সাক্ষী আসুক, যত বেলায় হোক, তিনি প্রতিদিনের সব সাক্ষী জেরা নিয়েই আদালত শেষ করেন। তাঁর মানবিকতা ও আন্তরিকতার কারণে প্রচুর মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমছে।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. মেহেদি হাসান জানান, স্যার গেল পাঁচ মাসে মোট ২৩২টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। যা মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের ইতিহাসে রেকর্ড। যেখানে গত বছর একই সময়ে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল মাত্র ৬১টি। একই সময়ে তিনি ৪৪৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দিও গ্রহণ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, আমি সাক্ষি দেবার জন্য আদালতের বারান্দায় পাঁচ বছর ধরে ঘুরছি। সাক্ষি দিতে পারিনি। পাঁচ বছর পরে আজ সাক্ষি দিতে পারলাম। খুব খুশি লাগছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস থেকে আশা করছি এভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ চললে বিচারে বিলম্ব কম হবে। বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন।
জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক আসাদুল আযম খোকন বলেন, আগে আদালতে এত সংক্ষিপ্ত সময়ে এত বেশি মামলা নিষ্পত্তি হবার নজির নেই। এটা একটি রেকর্ড। মাত্র পাঁচ মাসে ২৩২ মামলা নিষ্পত্তি অনেক বড় অর্জন। এখন আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। সমন পেলেই সাক্ষীরা স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হচ্ছেন। বিচারকের ধৈর্য ও আন্তরিকতার কারণে সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে মামলার জট কমছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, প্রতিদিনই আদালতে সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে মুখ্য আদালতে। চাপ থাকলেও দ্রুত বিচার নিশ্চিতে আমরা আইনজীবীরা সহযোগিতা করছি। এই পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি নজিরবিহীন।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি সাইদুর রাজ্জাক বলেন, মাত্র পাঁচ মাস আগে নতুন মুখ্য বিচারক স্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ফ্যাসিস্ট আমলে সাক্ষীদের ডাকা হলেও সাক্ষ্য নেওয়া হতো না। বিচারক, পেশকার, সরকারি কৌশলীদের মধ্যে অনীহা ছিল। এখন সবাই সমন পাঠাচ্ছেন, সাক্ষ্য নিচ্ছেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলীর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতায় এ সাফল
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.