আলমডাঙ্গার কালিদাসপুরে কর্মসৃজন প্রকল্পে অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্প শুরু হতে না আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নে শুরু হয়েছে হরিলুট। প্রায় অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাটের পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট পিআইসির সভাপতিদের। প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি মহিলা মেম্বরের স্বামী ও ছেলের নাম আছে শ্রমিকের নামের তালিকায়। এমনকি ট্রাকের মালিকের নামও রয়েছে এ তালিকায়।

জানা যায়, গত ৭ নভেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলায় শুরু হয়েছে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচী। আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে আমন ধান কাটার মরসুম। আমন ধান কাটার পূর্বে কিছুদিন শ্রমিকদের হাতে তেমন কাজ থাকে না। বেকার জীবন যাপন করতে হয়। ফলে দরিদ্র শ্রমিকদের অভাব অনটন বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যা থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মুক্তি দিতে সরকার কর্মসৃজন কর্মসূচী চালু করেছে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের মত কালিদাসপুর ইউনিয়নে ৪টি কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। শ্রীরামপুরের লুতফর আলীর বাড়ি থেকে মজিবরের বাড়ি ভায়া কুমার নদীর ব্রিজের দুপাশে ভায়া জগন্নাথপুরের সাত্তারের বাড়ি হতে  গোরস্তান পর্যন্ত, শ্রীরামপুর নূর আলীর বাড়ি হতে কোরবানের বাড়ি পর্যন্ত এবং জাকিরের দোকান হতে ক্যানেল পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামত এই ৫৬ নং প্রকল্পটির পিআইসির সভাপতি হাসিবুল ইসলাম ম-ল মেম্বার। এই প্রকল্পে প্রতিদিন ৫২ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা থাকলেও গত ৫ দিন মাত্র ২৪ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর সোমবার সরেজমিন প্রকল্পস্থল ঘুরে দেখা গেছে, ২৮ জন শ্রমিককে কাজ করতে।

পারকুলার রেজাউল ম-লের বাড়ি থেকে জিকে ব্রিজ ভায়া ম-লপাড়ার বটগাছ থেকে গোরস্থান ভায়া ডিএফসি-৭ মাঠের খাল পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামত এই ৫৩নং প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি শ্যামলী খাতুন মেম্বার। প্রতিদিন এই প্রকল্পে ২৫ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও সরেজমিন ঘুরে গতকাল সোমবার ১৪ জন শ্রমিককে পাওয়া গেছে। মেম্বার শ্যামলী খাতুন নিউজ না করতে এ প্রতিবেদককে অনেক অনুরোধ করেছেন। এ সময় তিনি দাবি করেন এই টাকা অনেককে দিতে হয়। তাই সব শ্রমিক দিয়ে কাজ করা সম্ভব হয় না।

৫৪ নং প্রকল্পের পি আইসির সভাপতি হাজেরা খাতুন মেম্বার। আসাননগরের ঈদগা গোরস্থান থেকে মইজউদ্দীন মালিথার জমি ভায়া কুমার নদের ব্রিজ ভায়া লতিফের বাড়ি হতে কলিমের বাড়ি ভায়া মইন উদ্দীনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামত প্রকল্পে প্রতিদিন ২৫ জন শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানোর নির্দেশনা থাকলেও গতকাল কর্মস্থলে গিয়ে ১৬ জন শ্রমিক পাওয়া গেছে।

কালিদাসপুর ইউনিয়নের মেম্বার মঞ্জু আলী জানান, প্রতিদিন এই প্রকল্পে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেছে। গতকাল সোমবার ১/২ জন শ্রমিক  বেশি নিয়েছেন। ট্যাগ অফিসার প্রকল্পস্থলে যাওয়ার সংবাদ পেলে আশপাশের বাড়ির শ্রমিকদের ডেকে ওেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, মহিলা মেম্বার হাজেরা খাতুন শ্রমিকের তালিকায় তার স্বামী ও সন্তানের নাম রেখেছেন। ওই শ্রমিকের তালিকায় আসাননগরের খেদ আলীর ছেলে মিন্টুর নাম রয়েছে। অথচ মিন্টু একটি ট্রাকের মালিক।

৫৫ নং প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি আফিল উদ্দীন মেম্বার। ডম্বলপুর নতুনপাড়ার মোজামের বাড়ি হতে জিকে ক্যানেল ভায়া আনসার মুন্সির বাড়ি হতে জিকে ক্যানেল ভায়া আব্দুল ওহাবের বাড়ি হতে কুমার নদ পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামমতের এই প্রকল্পে ৩৯ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর নির্দেশনা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত ২২ জন করে শ্রমিক কাজ করেছে। এ তথ্যের সত্যতা ট্যাগ অফিসার নিশ্চিত করেছেন।

কালিদাসপুর ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব বর্তিয়েছে বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড আলমডাঙ্গা শাখার কর্মকর্তা শাইলা শারমিনের ওপর। তিনি বলেন, আমার অফিসে অনেক কাজ। সেগুলি করে কর্মসৃজন প্রকল্প দেখতে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে আমার অফিস থেকে একজন কর্মচারী প্রতিদিন প্রকল্পস্থলে গিয়ে মনিটরিং করে আসেন। কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করার বিষয়টি তিনি অবগত। তবে মাস্টারোলে অধিক শ্রমিক দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের কোনো সুযোগ দেবেন না।

কালিদাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পটি সরকার দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘবে সৃষ্টি করেছে। মাস্টাররোলে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অপচেষ্টাও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে বেঈমানির সামিল। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর হতে হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More