ইউপি নির্বাচন : সহিংস দ্বিতীয় ধাপে শঙ্কার ভোট আজ

স্টাফ রিপোর্টার: গত ১০ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৬৯টি। এতে নিহত হয়েছেন ৮৫ জন। আহত ছয় হাজার ৪৮। প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেই সংঘাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনও ‘বিব্রত ও উদ্বিগ্ন’। এমন পরিস্থিতিতেই আজ বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট নেওয়া হচ্ছে। ৮৩৫ ইউনিয়ন পরিষদে সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে। এ ধাপে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ জন, আহত চার শতাধিক। তাই এ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা ও শঙ্কা রয়েছে ভোটার আর প্রার্থীদের মধ্যে। যদিও পাঁচটি ইউপির সবক’টি পদে এবং ৮১টির চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত সদস্যপদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্যপদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আগের বারের মতো এবারও দলীয় প্রতীকে ভোট নেওয়া হলেও এই নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের কোনো প্রার্থী নেই। তবে অনেক এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে দলটির। জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দলের প্রার্থীও রয়েছেন মাঠে। কিন্তু বেশিরভাগ স্থানেই নৌকা প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদধারী বিদ্রোহীরা। মূলত তাদের মধ্যেই হানাহানি ঘটছে। ফলে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪৬৯টি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতায় আওয়ামী লীগের ৪১ জন, বিএনপির দু’জন, সাধারণ মানুষ ২২ জন, পুলিশের গুলিতে ১৫ জন এবং একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে গত ১০ দিনে। এ সময়ে ৯৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগের সাতজন এবং চারজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউপি নির্বাচনে ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে ‘ঘরে ঘরে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এরপরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটারদের অভয় দিয়ে নির্বিঘেœ কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ইউপি ভোটের তপশিল ঘোষণা করা হলেও আজ ভোট গ্রহণ হবে ৮৩৫ ইউপিতে। কেননা, পাঁচ ইউপিতে সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সাত ইউপিতে ভোট স্থগিত করেছে ইসি এবং এক ইউপির ভোট বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আজ ৮৩৫ ইউপিতে ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে আট হাজার ৪৯২টি। মোট ভোটার এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে এ ধাপে ১৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ৮৩৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন তিন হাজার ৩১০ জন; সংরক্ষিত নারী প্রার্থী ৯ হাজার ১৬১ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। এ নির্বাচনে মোট ৪১ হাজার ২১৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই ধাপে ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছুনো হয়েছে। ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
দেশে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪ ইউপি এবং ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউপিতে ভোট আজ ১১ নভেম্বর। তৃতীয় ধাপে এক হাজার তিন ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More