রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীতে গোসল করতে নেমে নীরব রায় উৎস (১৮) নামের এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) আনুমানিক বিকেল ৫টায় এ ঘটনা ঘটে।
জলঢাকা উপজেলার শোলমারি ইউনিয়নের গোপালঝার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন রায়ের বড় ছেলে উৎস। সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে ফেরা বন্ধু শাকিল (১৭) জানায়, আমরা বন্ধুরা রংপুরের বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করি। রংপুর বেতারের পাশে নিড়িবিলি ছাত্রাবাসে সবাই থাকি। প্রায় সবারই এইচএসসি (প্রাকটিক্যাল) পরীক্ষা চলমান। আজ উৎসর পরীক্ষা ছিল। রংপুরে আজ সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না। প্রচণ্ড গরমে আমরা সাত বন্ধু মিলে ঘুড়তে বিকেলে তিস্তা মহিপুর ব্রিজে আসি। ব্রিজের উপরে সবাই মিলে ছবিও তুলি।
শাকিল বলেন, ‘আমাদের মধ্যে উৎস সবার চেয়ে বেশি সাঁতার জানে এবং সব খেলাধুলায় সে বেশি পারে। ব্রিজের উপরেই হঠাৎ উৎস (১৮) বলে ওঠে যে মেসে তো কারেন্ট নাই, তাই আমরা তিস্তায় গোসল করে মেস এ যাই। আমি বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও বন্ধু রুপম (১৮) প্রথমে রেলিং এর উপরে উঠে নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারপর উৎস (১৮) ঝাঁপ দেয়। এরপর আমিও ঝাঁপ দেই। নদীর তীব্র স্রোতে আমরা তখন ভেসে যাচ্ছিলাম, কোনভাবেই পাড়ে যেতে পারছিলাম না। ব্রিজ থেকে কিছু দূর ভেসে আসার পর দক্ষিণ দিকে (ভাটি পার্শ্বে) প্রাণপণ লড়াই করার পর আমি ও রুপম কিনারে পৌঁছাই।
পিছনে ফিরে দেখি তীব্র স্রোত উৎসকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা চিৎকার করলে একজন মাছ ধরা জেলে এগিয়ে আসে। তারপর উৎস বাঁচাও বাঁচাও বলে ঘূর্ণিপাকের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে তলিয়ে যায়।
চোখের সামনে উৎস তলিয়ে গেলেও বাঁচাতে পারলাম না বলে সে কাঁদতে শুরু করে।
লক্ষিটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল-হাদী জানান, আনুমানিক বিকেল পাঁচটার পর সংবাদ পেয়ে আমি বিষয়টি রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে জানাই। ছয়টার মধ্যে ডুবুরিদল এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নদীর যে পয়েন্টটিতে সে ডুবে গেছে মূলত জায়গাটি খুব গভীর। উজানের ঢলের স্রোতের তীব্র গতিবেগের ফলে গভীর সে জায়গাটিতে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়। শুনেছি সেই ঘূর্ণিপাকেই উৎস ডুবে গেছে।
উদ্ধার অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর টিম লিডার নুরুল ইসলাম জানান, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৬ জনের ডুবুরি দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই ও উদ্ধার কাজ শুরু করি। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা করেও নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ভাটি তীরের জায়গাটিতে প্রবল স্রোতের বেগ ও জায়গাটি বেশ গভীর হওয়ায় ডুবুরিরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। আলোক স্বল্পতা ও তীব্র স্রোতের কারণে অবশেষে মতো উদ্ধার কাজ শনিবারের মতো শেষ করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, কেন আমরা তারুন্যের আবেগে এমন কাজ করি। যে তীব্র স্রোত দেখলেই ভয় লাগে অথচ আমরা ঝাঁপ দিচ্ছি। ডুবুরি দলের অনেক চেষ্টার পরেও নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
উৎসকে না পেয়ে তিস্তা নদীতে রেখেই পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের স্ব স্ব জায়গায় ফিরতে হচ্ছে। এ যে কতো কষ্টের একমাত্র তারাই বুঝতে পারতেছে। নদী তীরবর্তী সবাইকে এ বিষয়ে কৌশলী ভূমিকা ও সচেতন হওয়ার আহবান জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.