একশো এগার প্রকার পিঠার ডালি সাজিয়ে বসেছিলো ওরা

গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজে দিনব্যাপী হয়ে গেলো পিঠা উৎসব

গাংনী প্রতিনিধি: ভাপা, চিতই, পাকান, ভাজা কুলি, ভেজা কুলি, শসা, সরু পিঠা, ছিটে পিঠা, ইলিশ পিঠা, খিরসা, পাটি সাপটাসহ নাম জানা অজানা একশো এগার প্রকার পিঠা-পুলির ডালি সাজিয়ে বসেছিলো একঝাঁক তরুণী। তারা সকলেই গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রী। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা এসব পিঠা-পুলি নিয়ে দিনব্যাপী হয়ে গেলো পিঠা উৎসব। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একই সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদানের উদ্বোধন করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ খোরশেদ আলম ও গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।

গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজ চত্বরে শুরু হওয়া এ পিঠা উৎসবে ছিলো বেশ ভিন্নতা। গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য নাম ছিলো স্টলগুলোর। শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তৈরী করা এসব পিঠা সাজিয়েছেন তাদের স্টলে। শোভা পায় পিয়াসা, পাটি সাপটা, আন্দসা, চিতই, ভাপা, পুলি, সরু, মালাই রোল, চিটা রুটিসহ ১১১ ধরণের পিঠা সাজানো রয়েছে ২৩টি স্টলে। ভোজন রসিকরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর স্বাদ নিচ্ছেন। সেই সাথে অনেকে এসেছেন তাদের সন্তানদের পিঠা পুলির স্বাদের পাশাপাশি পিঠার সাথে পরিচয় ঘটাতে।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকাইয়া খাতুন ও সুমাইয়া খাতুন জানান, পিঠা উৎসব পিঠা পুলির সাথে মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যম। এ আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মরা যেমন হরেক রকম পিঠার সাথে পরিচিত হতে পারছে তেমনি স্বাদ নিতেও ভুলছেন না। এমনি আয়োজন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করা উচিৎ। একই কথা জানিয়েছেন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনথীয়া ও শাহানাজ ইসলাম।

পিঠা উৎসব উপভোগ করতে আসা স্কুল শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা জানান, বিদেশী অনেক খাবার আমাদের দেশে জায়গা করে নিয়েছে। যার ফলে মায়েদের হাতের অনেক পিঠা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। প্রতিবছর পিঠা উসবের আয়োজন করা হলে নতুন প্রজন্ম দেশি পিঠায় পরিচিত হতে পারবে।

কলেজ শিক্ষিকা নিলুফার চৌধুরী জানান, গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে শীতকালে নানা ধরণের পিঠাপুলি তৈরী হয় প্রতিটি বাড়িতে। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। পিঠা উৎসবের আয়োজন এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

পিঠা উৎসবে আসা অতিথি গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ অব্দুর রাজ্জাক জানান, অনেক পিঠার সাথেই আমাদের পরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক পিঠার নাম জানা থাকলেও স্বাদ মনে নেই। আজকের এই পিঠা উৎসবে অনেক পিঠা খেয়ে ছোট বেলার অনেক স্মৃতিই মন করিয়ে দেয়। এভাবে শীতভর পিঠা উৎসব হোক গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে।

গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ রমজান আলী জানান, ছোটবেলায় মায়েরদের হাতের পিঠা পুলির স্বাদে সময় কাটতো। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পিঠাপুলি তৈরী করা হতো। জামাই আদর ও আত্মীয়তাও করা হতো মুখরোচক ও বাহারী পিঠা দিয়ে। এমন পিঠা উৎসব প্রতিবছরই করা হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. খোরশেদ আলম জানান, শীতের শেষের দিকে হলেও আমরা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা নিয়ে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবে বিলুপ্তি হওয়াসহ নতুন নতুন পিঠা নিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ পিঠা খেতে এসেছেন। আমাদের এই উৎসবে যারা এসেছেন তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিবছরই এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন হবে। এছাড়াও উৎসবে পিঠা নিয়ে অংশ গ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More