ঐতিহাসিক আম্রকানন রক্ষায় জেলা প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ

পরিচর্যা গাছের ঘনত্ব ও পুষ্টির অভাবে মারা যাচ্ছে মুজিবনগরের শতবর্ষী গাছগুলো

মুজিবনগর প্রতিনিধি: স্বাধীনতার তীর্থভূমি মেহেরপুরের মুজিবনগরে বিশাল আয়তনের ঐতিহাসিক (বৈদ্যনাথতলা) আম্রকাননজুড়ে রয়েছে স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী সময়ের স্মৃতিবিজড়িত নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তবে পরিচর্যা, গাছের ঘনত্ব ও পুষ্টির অভাবে মারা যাচ্ছে শতবর্ষী গাছগুলো। বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরের আম্রকানন রক্ষার দাবি মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতাকামী সর্বসাধারণের।

জানা গেছে, মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স চত্বরে প্রায় ৩০ একর আয়তনের আম্রকানননে ছিলো সারিবদ্ধ ১২৬০টি আমগাছ। যার মধ্যে মধ্যে আজো বেঁচে আছে ১১০৭টি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়ঝাপটায় ভেঙে পড়া শতাধিক আমগাছ মৃতপ্রায়।

অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন জমিদার কেদারনাথ রায় তার স্ত্রীর আচারের বাগান হিসেবে এ আমবাগানটি তৈরি করেন বলে জানা যায়। বাগানটিতে ১২ জাতের ১২৬০টি আমগাছ ছিলো। তবে বেশিরভাগ আমই বেশ টক। কেদারনাথ রায়ের এই আমবাগান দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান এবং একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে চলে আসে।

বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামান শপথ গ্রহণ করেছিলেন।

মুজিবনগরে ঘুরতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান কবীর বলেন, মুজিবনগর ও মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গাথা। আম্রকানন মুজিবনগরের স্মৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। সেই স্মৃতিবিজড়িত আমবাগান রক্ষা করা না হলে আগামী প্রজন্ম বাস্তব ইতিহাস দেখা থেকে বঞ্চিত হবে।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিজন বলেন, শত বছরের ইতিহাস আম্রকানন। এখানে এসে শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখে কেউ ফিরে যায় না বরং আম্রকানননে বসে অনেক কিছুই উপলদ্ধি করা যায়।

চুয়াডাঙ্গার কলেজশিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নতুন করে গাছ লাগিয়ে এখানকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে কিন্তু পুরাতন গাছ টিকিয়ে রাখার পরিকল্পনা না থাকলে ইতিহাসের মৃত্যু ঘটবে। তাই ফাঁকা জায়গায় নতুন গাছ লাগানোর পাশাপাশি শতবর্ষী গাছ পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে রাখাটা জরুরি। তাহলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ইতিহাসের বাস্তবতা খুঁজে পাবে।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিবনগরের আম্রকাননের আমগাছ সংরক্ষণ ও পরিচর্যার জন্য ইতোমধ্যে ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬শ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ে। চাহিদাপত্রটি প্রকল্প আকারে অনুমোদন হয়েছে। বেঁচে থাকা গাছের পরিচর্য়া, রক্ষণাবেক্ষণ, গাছের খাদ্য ও পুষ্টি সংরক্ষণ, আগাছা পরিষ্কার, নতুন গাছের চারা রোপণ, কম্বিনেশন ফার্টিলাইজার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ বেশ কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে চাহিদাপত্রে।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো মারা যাচ্ছিলো। আম্রকানন মেহেরপুরের সম্পদ। একদিকে যেমন এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়, অন্যদিকে ঐতিহাসিক স্মৃতিও বহন করে। বাগান পরিচর্যার জন্য আমাদের আলাদা কোনো বরাদ্দ ছিলো না। কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করছি গাছগুলোকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার জন্য খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More