কালীগঞ্জে চিকিৎসক ছাড়াই চলছে মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: হাসপাতালের সবকিছুই চকচকে ঝকঝকে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় সিজারের জন্য রয়েছে অত্যাধিুনিক বেড ও যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র,রোগীদের জন্য রয়েছে বেশ বড়সড় ওয়েটিং রুম। এখানে যা কিছু আছে তা দিয়ে মা ও শিশুর চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব। কিন্ত চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় যা, সেই চিকিৎসকই নেই। অথচ প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে সকাল হলেই চারপাশ থেকে ধেয়ে আসছে মা শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগী। এভাবে কোন ডাক্তার ছাড়াই চলছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল। অগত্যার পরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এফ ডব্লিউ ভি নার্স রেহানা নাসরিন দিনভর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড়ছেন। আর রোগীর পরিস্থিতি একটু জটিল মনে করলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন অন্য হাসপাতালে।

হাসপাতালের একমাত্র ভরসা পরিশ্রমী রেহানা নাসরিন ব্যবস্থাপত্র দিতে না পারলেও আগত রোগীদের মুখে শুনেই জ¦র, ঠা-া কাশির প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। অথচ হাসপাতালটিতে মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ দুইজন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একজন ভিজিটর, একজন পিয়ন ও একজন (চুক্তি ভিত্তিক) দায় দিয়েই চলছে কর্মকা-। যে কারণে আগত রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে হয়ে বিমুখ ফিরে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ডাক্তারের অভাবে রোগী ভর্তি না হওয়ায় হাসপাতালের আধুনিক যন্ত্রাংশ ও অব্যবহৃত বেডগুলি ধুলাবালি জমে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কালীগঞ্জ পৌর এলাকার শিবনগর কেডিসি সংলগ্ন স্থানে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। সেখানে মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ দুইজন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও শুরুতেই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ডা. কামাল হোসেন ও তরিকুল ইসলাম নামে দুইজন মেডিকেল অফিসার সেবা প্রদান শুরু করেন। কিন্তু গত ৭ জুলাই তারাও ডেপুটেশনে হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সেই থেকেই হাসপাতালটি ডাক্তার শূন্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালটিতে প্রসুতি মায়েদের জন্য নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি, স্থায়ী/অস্থায়ী বন্ধাত্বকরণ ছাড়াও শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের কথা।

হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা প্রদানকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এফ ডব্লিউ ভি নার্স রেহানা নাসরিন জানান, প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন। কিন্তু তার ব্যবস্থাপত্র দেয়ার কোন অনুমতি নেই। তাই রোগীদের মুখে শুনেই শুধুমাত্র জ¦র, ঠা-া কাঁশির ওষুধ দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও জানান, এখানে আধুনিক মানের অপারেশন থিয়েটার থাকলেও ডাক্তার পোস্টিং না হওয়াতে প্রসুতি মায়েদের ডেলিভারি বা অন্যান্য সেবা প্রদান সম্ভব হয় না।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তার না পেয়ে ভুক্তভোগী আকলিমা খাতুন জানান, যদি ডাক্তারের অভাবে সেবা না পায়, তাহলে এত সুন্দর হাসপাতাল থেকেই বা লাভ কি। তিনি ভিজিটরের মাধ্যমে কিছু ওষুধ পেলেও কাঙ্খিত সেবা না পাওয়াতে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সেবা নিতে আসা শিবনগর গ্রামের ডেইজি বেগম জানান, তিনি প্রচ- ঠা-া কাঁশি নিয়ে হাসপাতালটিতে এসেছিলেন। ডাক্তার নেই। তবে হাসপাতালের এক আপা তাকে ভালো করে দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তিনি বলেন,গত মাসেও তিনি জ¦রে আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন। এটি একটি ছোট হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন সকালে রোগীর ভীড় পড়ে যায়। সব রোগী নার্স আপায় দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। তবে জটিল রোগের লক্ষণ দেখলেন তিনি অন্যত্র পাঠিয়ে দেন।

কাশিপুরের আকলিমা বেগম জানান, মা ও শিশু চিকিৎসায় এ হাসপাতালটি সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখানকার সবকিছু ঠিকঠাক আছে। তবে উদ্বোধনের প্রায় বছর পার হলেও ডাক্তার নেই। তিনি বলেন, প্রথম দিকে একজন ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখেছেন কিন্ত এখন নেই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

কালীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ বারী জানান, তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ১০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতালটিতে রোগীদের জন্য আধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও শয্যা রয়েছে। হাসপাতালটিতে দুইজন ডাক্তার, ৪ জন এফ ডব্লিউ ভি নার্স, ১ জন ক্লিনার, ১ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ১ জন পিয়ন পোস্টিং হওয়ার কথা। কিন্তু শুরুতে দুইজন ডাক্তার পোস্টিং নিলেও তারা ডেপুটেশনে চলে গেছেন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে সপ্তাহে একদিন বুধবার হাসপাতালে এসে ক্যাম্প করে থাকেন। তিনি আরো জানান, দেশের অন্যান্য স্থানেও স্থাপিত মা ও শিশু হাসপাতাল গুলির কোথাও এখনো সরকারিভাবে ডাক্তার বা জনবল নিয়োগ হয়নি। এসব কারণেই ডাক্তার জনবল সমস্যায় হাসপাতালটিতে সেবা প্রদানে সমস্যা রয়েই গেছে। এমন বিষয়টি সমাধানে তারা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের অবহিত করে আসছেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More