কুষ্টিয়ার এসপির সমর্থনে ১১ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলেছেন। ভাস্কর্য ইস্যুতে দেয়া তার বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অস্ত্র হাতে লড়াই করে পাওয়া বাংলাদেশের মৌল চাওয়াগুলোকে আরও একবার স্পষ্ট করেছে। একইভাবে এসপির বক্তব্যের বিরুদ্ধে দেয়া হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য বিবৃতি তাদের একাত্তরের চেতনা বিরোধী অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন দেশের ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেনÑ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি লেখক গবেষক মফিদুল হক, ডা. সারোয়ার আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাট্যজন আব্দুস সেলিম, মামুনুর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংস্কৃৃতিজন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও আবৃত্তি শিল্পী আহকামউল¬াহ।

বঙ্গবন্ধু ও বিপ¬বী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় গত ২১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ার করে দেন। উগ্রবাদীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এক, উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই, একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু ও ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন, আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর প্যায়ারা পাকিস্তান।

পুলিশ সুপারের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি তার বক্তব্যের প্রতি জোর সমর্থন জানায়। তবে আঁতে ঘা লাগে উগ্র মৌলবাদীদের। এসপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করার পাশাপাশি তাকে বরখাস্ত করার আবদার জানিয়ে বিবৃতি দেয় হেফাজতে ইসলাম। যাদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার অভিযোগ, উস্কানি দেয়ার অভিযোগ তাদের এমন আস্ফালন ও আবদারের যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন দেশের প্রগতিবাদী মানুষ। অভিন্ন অবস্থান থেকে বিবৃতি দেন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট নাগরিকেরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো বাংলাদেশ পুলিশ। রাজারবাগে ইতিহাস সৃষ্টি করা সেই বিদ্রোহী চেতনাই কুষ্টিয়ার এসপির বক্তব্যে লক্ষ্য করেছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষে সচেতন এবং সুদৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি।

তারা বলেন, আরাফাত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন। ভাস্কর্য ইস্যুতে দেয়া তার বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অস্ত্র হাতে লড়াই করে পাওয়া বাংলাদেশের মৌল চাওয়াগুলোকে আরও একবার স্পষ্ট করেছে। একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের আস্ফালনের মধ্যে এমন সাহসী স্পষ্ট উচ্চারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষকে আশ্বস্ত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এসপির বক্তব্যের বিরোধীতাকারী এ অংশটিকে আমরা খুব ভালভাবে চিনি। এরা একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি। বর্বর পাকিস্তানীদের প্রজন্ম। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয়ে সামনে আসে। কখনও জামায়াত শিবির। কখনও বা হেফাজত। এরা আজও বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালীর যে মৌল অর্জন সব ওরা গিলে খেতে চায়। একই কারণে এরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এরপর আর এদের কোনো ছাড় দেয়া যায় না মন্তব্য করে তারা বলেন, এ কারণেই এসপি এই উগ্রবাদীদের চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে আমরা মনে করি।

তারা বলেন, অথচ আমরা দেখছি উগ্রবাদীরা সতর্ক না হয়ে উল্টো এসপির বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। বিষোদগার করছেন। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More