কুষ্টিয়ায় ১২ ঘন্টায় একই পরিবারে ৩ জনের মৃত্যু

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: মিরাজুল ইসলামকে (৪৫) সান্ত¡না দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন তিনি। কেনোনা সারাদিনটা কেটেছে তার কবরস্থানে প্রিয়জনের লাশ নামাতে। রাতে অসুস্থ হয়ে মারা যান তার মা। মাকে সকালে দাফন করার পরপরই শুনতে পান বোন মারা গেছেন। বোনের মৃত্যুর এক ঘণ্টা পরই মৃত্যু হয় বাবার। ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গোবিন্দগুনিয়া গ্রামে। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন লালন মল্লিক (৭৫), লালন মল্লিকের স্ত্রী আনজেরা খাতুন (৬৫) ও তাদের মেয়ে আঙ্গুরা খাতুন (৪০)।

পরিবার সূত্র জানায়, প্রায় ৪৫ বছর ধরে মিরপুর শহরে থানার পাশে চায়ের দোকান চালিয়ে আসছিলেন লালন মল্লিক। তার দুই ছেলে ও তিন  মেয়ে। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। ১০ সেপ্টেম্বর লালন মল্লিকের স্ত্রী আনজেরা খাতুন (মিরাজুলের মা) জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সাতদিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আনা হয় তাকে। তবে তার শরীর খুবই দুর্বল ছিলো। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে গত বুধবার হঠাৎ করে লালন মল্লিক স্ট্রোক করলে তাকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় স্ট্রোক করে আনজেরা খাতুন মারা যান। এরপর স্ত্রীর লাশ দেখতে লালন মল্লিককে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন।

গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় আনজেরা খাতুনকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষ করে সবাই যে যার বাড়ি চলে যান। সন্তানদের মধ্যে তৃতীয় আঙ্গুরা খাতুনও মায়ের দাফন শেষে বাবার বাড়ির পাশের গ্রাম নওয়াপাড়ায় স্বামীর বাড়ি চলে যান। আঙ্গুরা খাতুন বাড়িতে যাওয়ার পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় তিনিও স্ট্রোক করে মারা যান। মাকে দাফনের এক ঘণ্টা পরই  বোনের মৃত্যুর খবর পেয়েই মিরাজুল বোনের লাশ দেখতে ছুটে যান। বোনের বাড়ি পৌঁছামাত্রই শুনতে পান, তার বাবাও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এ খবর শুনেই মিরাজুল আবার ছুটে আসেন বাবার কাছে।

মিরাজুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা-মায়ের জানাজা তিনি নিজেই করেছেন। ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা, মা ও বোনকে হারানো কতটা কষ্টের ও বেদনার, তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। আজ সারাদিন শুধু প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর শোনার ওপরেই ছিলেন তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More