গাংনীর বিটিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য : সভাপতির দ্বৈতরুপ

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীর বি.টি.ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আলোচিত নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় পরিচালনা পর্যদের বর্তমান সভাপতি রেকাত আলীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে প্রথমে তিনি বিপক্ষে অবস্থান নিলেও এখন সেই নিয়োগ বৈধ করার জন্য তিনি প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়েছেন।

জানা গেছে, বিটিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনামুল হক ‘গ’ শাখাতে তিন জন শিক্ষকে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেয়। সেসময় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। অবশ্য সিরাজুল ইসলাম বলেছেন তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্বে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা রেকাত আলী। ২০২২ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ে স্বশরীরে কিংবা হাজিরা খাতায় এই তিনজন সহকারী শিক্ষকের অস্তিত্ব ছিলো না। এই তিন শিক্ষক শেফালি খাতুন, আল মামুন ও শাহনাজ পারভীন সেপ্টেম্বর/২২ মাসে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে যান। তখন বাধা হয়ে দাঁড়ান পরিচালনা পর্যদের বর্তমান সভাপতি রেকাত আলী। প্রধান শিক্ষক অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিন শিক্ষককে অনুমোদনবিহীন শাখায় নিয়োগ দিয়েছে এবং নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন মর্মে প্রচার করেন সভাপতি রেকাত আলী। তখন এলাকার মানুষ রেকাত আলীর সাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হন। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক ওই তিন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এমপিও শিট দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। তিনি এমপিও শিটে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে দাখিল করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সভাপতি রেকাত আলী গত বছরের ১১ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর জালিয়াতি প্রসঙ্গে আবেদন করেন।

সভাপতি রেকাত আলীর আবেদন বলা হয়, প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষক ফরোয়াডিং ও বেতন উত্তোলনসহ নানা কর্মকা- সম্পন্ন করেন। যার অপকর্মের কথা অবর্ণনীয়। তাছাড়া ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর রুপালী ব্যাংক শাখায় যে বেতন উত্তোলন করেন সে স্বাক্ষরটিও সভাপতির নয় বলে দাবি করেন সভাপতি রেকাত আলী।

এদিকে অনুমোদনবিহীন শাখায় নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ রাস্তায় নামেন। তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন শুরু করেন। প্রধান শিক্ষক এনামুলের শাস্তি দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করতে থাকেন অভিযোগ। এরই মাঝে গত ১৫ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক ওই তিন জনের ইনডেং সাময়িক কর্তনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেন।

অপরদিকে, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতি রেকাত আলী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধ অবস্থান থেকে গোপনে গোপনে সরে আসেন। প্রধান শিক্ষকের যে অপকর্ম ও দুর্নীতি নিয়ে তিনি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই তিনি গোপন আঁতাতের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক সভাপতিকে ম্যানেজ করেছে বলে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়।

জানা গেছে, ওই তিন সহাকারী শিক্ষককে বিদ্যালয়ে প্রবেশে প্রধান বাধা ছিলেন সভাপতি রেকাত আলী। অথচ গোপন আঁতাতের মাধ্যমে সেই রেকাত আলী আবার তাদেরকে বৈধ করার জন্য মহাপরিচালক বরাবর প্রেরিত পত্রে স্বাক্ষর করেন। গত ৬ আগস্ট/২২ বিদ্যালয়ের প্যাডে প্রধান শিক্ষক ইনামুল হক এবং সভাপতি রেকাত আলীর যৌথ স্বাক্ষরে তিন শিক্ষক যথাক্রমে শেফালি খাতুন, আল মামুন ও শাহনাজ পারভীনকে এমপিওভুক্তির জন্য ডিজি বরাবর সুপারিশ করেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযুক্ত সভাপতি রেকাত আলী বলেন, বিষয়টি তদন্ত চলছে তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলবেন না।

তবে তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী বলেন, তদন্তে অনেক কিছুই পাওয়া গেছে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More