চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহে মোটরসাইকেল বাঁচাতে গিয়ে বিপত্তি : যাত্রীবাহী বাস উল্টে নারীসহ আহত ১৫

ডিঙ্গেদহ/সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীকে বাঁচাতে ব্রেক করাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে নারীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। বাসটি গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহ হতে যাত্রী নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় যাবার সময় চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগনগর ৪ মাইলের জামানের বাড়ীর সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, একটি লোকাল বাস ঢাকা মেট্রো জ-০৪-০৬৯৪ নম্বরের যাত্রী নিয়ে ঝিনাইদহ হতে চুয়াডাঙ্গায় যাবার সময় বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগনগরে ৪ মাইলের নিকট পৌঁছুলে জামানের বাড়ীর পাশ দিয়ে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে উঠতে গেলে যাত্রীবাহি বাসের সামনে পড়ে। বাসচালক  মোটরসাইকেল চালককে বাঁচানোর জন্য বাসটি বামদিকে দিয়ে পার হবার চেষ্টা করলে সামনে একটি ট্রাক দেখতে পেয়ে বাসটি ব্রেক করে দাঁড়াবার চেষ্টা করে। এ সময় বাসটি আস্তে আস্তে মহসড়কের ওপর উল্টে পড়ে ১৫ জন আহত হয়।

আহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রনগোহাল গ্রামের মৃত মোজাহারের ছেলে মোটরসাইকেল চালক আজহারুল ইসলাম (৫২), কামাল হোসেনের মেয়ে ফাবিহা আক্তার (১৩), বাসযাত্রী দামুড়হুদার দশমীপাড়ার মিজানুর রহমানের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪০), মেয়ে মিম্মাতুল দিশা (১৯), চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী তহমিনা খাতুন (৫৫), চুয়াডাঙ্গা সদরের পিরোজখালী গ্রামে আব্দুল হান্নানের মেয়ে হাবিবা খাতুন (১৮), শ্রীকোল গ্রামের নাজমুল ইসলামের স্ত্রী সাধনা আক্তার মীম (২০), সরোজগঞ্জ বাজারপাড়ার মনিরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি খাতুন (২৬), ছেলে মাহিম ইসলাম (৯), সরোজগঞ্জের ইমরুল হাসানের মেয়ে উম্মে হাবিবা (৩২), আব্দুল হাকিমের স্ত্রী আফরোজা খাতুন (৫০), ঝিনাইদহ জেলার ডাকবাংলা গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে সানজিদা খাতুন (২৮), ঝিনাইদহ জেলার সাবদালপুরের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া (৫), তার ভাই আবু উবাইদা (১১) এবং মেহেরপুর জেলার হরিরামপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে আব্দুল আলিম (১১)। আহত ৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ী পাঠানো হয়েছে এবং ৮জনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানায়, গতকাল রোববার একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মেট্রো জ-০৪-০৬৯৪) ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গায় আসছিলো। বাসটিতে প্রায় ৪০-৫০ জন যাত্রী ছিলেন। এ সময় ডিঙ্গেদহ তেল পাম্পের অদূরে পৌঁছুলে একটি মোটরসাইকেল বাঁচাতে জোরে ব্রেক করলে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় বাসটি। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর উল্টে যায়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা জাহারুল তার ভাইয়ের মেয়ে ফাবিহা আক্তার রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর জখম হয়। এ সময় বাসে থাকা ৬ যাত্রী আহত হয়। এ সময় বাসের চালক, হেলপাররা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার ও ডিফেন্স সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

তারা আরও বলেন, ঘটনার পর এলাকাবাসী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে। এ সময় প্রায় ৩০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে শতশত যানবাহন দীর্ঘলাইন দেখা যায়। এতে যাত্রীসহ যানবাহন শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আহত মোটরসাইকেল চালক জাহারুল বলেন, আমি ও আমার ভাতিজি ফাবিহা আক্তারকে নিয়ে বেগমপুর থেকে মোটরসাইকেলযোগে ডিঙ্গেদহে আসছিলাম। এ সময় ডিঙ্গেদহ তেলপাম্পের অদূরে পৌঁছুলে  পেছন থেকে একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয় মোটরসাইকেলে। এতে আমি ও আমার ভাতিজি গুরুতর জখম হয়।

বাসযাত্রী আহত কলেজ ছাত্রী হাবিবা খাতুন বলেন, বাসটি ডিঙ্গেদহ তেলপাম্পের নিকটে পৌঁছুলে হঠাৎ সামনে একটি মোটরসাইকেল চলে আসে। এতে বাসটির চালক দ্রুত ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর উল্টে যায় বাসটি। এতে বাসের চালকের কোনো দোষ নাই। তবে বড় দুর্ঘটনা থেকে আমরা বেঁচে গেছি বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) এহসানুল হক তন্ময় বলেন, আহতের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক জাহারুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার একবার রক্ত বমি হয়েছে। এরপর যদি বমি করে তাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে রেফার্ড করা হবে। এছাড়া বাকি আহতের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ঘটনাটির বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি বলে জানান তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More