জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার: নদী মেখলা বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ এক বেদনাবিধুর-সকরুণ দিন। গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ, আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি, ভিশনারি স্বপ্নদ্রষ্টা, ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানকে আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রে ১৯৮১ সালের এই দিন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জিয়ার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা বাংলাদেশবিরোধী শক্তির সহ্য হয়নি। সততা, নিষ্ঠা, নিকষিত গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলির আধার এই মহান নেতার শাহাদত এ দেশের গণমানুষের হূদয়কে স্পর্শ করেছিল। তার শাহাদতে শোক-বেদনায় মূহ্যমান হয়ে পড়েছিল গোটা বাংলাদেশ। আজ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী। মাত্র সাড়ে ৪৫ বছরের সীমিত জীবন ছিল তার। এই ছোট্ট জীবনেই বিশাল ও মহত্তম সব কীর্তি স্থাপন করে গেছেন তিনি। জিয়াউর রহমান দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে, অনিশ্চয়তায় পতিত জাতির সামনে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সেই সময় আবারও ইথার কম্পনে ভেসে এলো সেই নাম। কালুরঘাটের বেতার-তরঙ্গ মারফত ছড়িয়ে পড়ল সেই বরাভয় :‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালে জাতীয় ইতিহাসের চরম দুর্যোগময় সময়ে ইথার কম্পনে ভেসে আসে মেজর জিয়াউর রহমানের বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠ। কালুরঘাটের বেতার-তরঙ্গ মারফত ছড়িয়ে পড়ল সেই বরাভয় :‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। বঙ্গশার্দুল জিয়া ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দুর্জেয় ভূখ-ে পাকিস্তানি শাসন-কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা করলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জীবন বাজি রেখে নিজের নামেই তিনি স্বাধীনতার যুগান্তকারী দুঃসাহসী ঘোষণা দেন। আবার পরবর্তীকালে রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধে স্বাধীনতার এই আহ্বানের সর্বজনীন রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের নামটিও এর সঙ্গে জুড়ে দিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। কেবল ঘোষণা নয়, নিজে অসম সাহসিকতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সম্মুখ সমরে। পরবর্তীকালে খেতাব দেওয়া হয় বীর-উত্তম। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ভয়াবহ ক্রান্তিময় সময়ে সংঘটিত হয় সৈনিক-জনতার সংহতির মধ্য দিয়ে এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব। সিপাহি জনতা জিয়াকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসায়। জিয়া জাতিকে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আনতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি। দিতে চেয়েছিলেন জাতিকে সম্মান আর গৌরব। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উদগাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার সময়ে বাংলাদেশকে বদলে ফেলেছিলেন জিয়াউর রহমান। পশ্চাদমুখী ও সংকীর্ণ সামন্তচিন্তার অর্গল ভেঙে তিনি বাংলাদেশকে স্থাপন করেছেন সম্মুখপ্রসারী, উদার ও আধুনিক ধারায়। আজ এ দেশের যেখানেই উৎপাদন, উন্নয়ন ও নির্মাণের স্বাক্ষর রয়েছে, সেখানেই মিলবে তার গণমুখী ও কল্যাণকর পরিকল্পনার ছোঁয়া। কেবল তার সমকালেই নয়, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দর্শন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজ এ দেশের জাতীয় আদর্শে পরিণত হয়েছে। একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জিয়াউর রহমান গ্রামমুখী অর্থনীতির ওপর জোর দেন। উপসামরিক আইন প্রশাসক থাকাকালে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামমুখী অর্থনীতি গড়ার আহ্বান জানিয়ে জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থ গ্রাম। বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য আমাদের গ্রাম ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে।’ গ্রামীণ জনজীবনের সার্বিক উন্নতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘গ্রামের নিরক্ষর ও দরিদ্র মানুষের দ্বারে আমাদের সভ্যতার বাণী নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই বলতে পারব যে, বাংলাদেশের উন্নতির জন্য আমরা কাজ করেছি।’ খাল খনন কর্মসূচি ছিল জিয়ার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১৯৭৬ সালের ১ নভেম্বর কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান যশোরের উলশি-যদুনাথপুর খাল খনন প্রকল্প হাতে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষিভিত্তিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সেচের পানির অপ্রতুলতা দূর করতে দেশব্যাপী ১৪ হাজার খাল খনন করেন। দেশকে যখন তিনি সামনের দিকে নিয়ে চলেছেন, সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। ১৯৮১ সালের ২৯ মে তিনি এক সরকারি সফরে চট্টগ্রামে যান। ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গভীর রাতে একদল সেনাসদস্য তাকে হত্যা করে। এই ৪৪ বছরে আজও মানুষের হূদয়ে উজ্জ্বল, ভাস্বর ও দেদীপ্যমান হয়ে আছে তার অম্লান স্মৃতি। জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী :জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্ট বাংলা রেজিমেন্ট-ইপিআরের বাঙালি পল্টনের মেজর ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর-উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হন। মোশতাক সরকারের ৮১ দিনের শাসনের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের প্রধান সেনা প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি গঠন করেন। তার দল বিএনপি গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে।
আট দিনের কর্মসূচি ; প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আট দিনের কর্মসূচি পালন করছে তার দল বিএনপি। গতকাল ২৯ মে বেলা ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ ৩০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মসজিদে মসজিদে গণদোয়া প্রভৃতি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশে জেলা ও উপজেলা-থানা-পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনাসভা, দুস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ-কাল দুই দিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পোস্টার প্রকাশ করেছে এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More