ব্যাপারীর দেখা নেই : কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা

জীবননগর ব্যুরো: করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি নিয়ে এবার চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার গরু পালনকারীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। বিশেষ করে যারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একটি বা হাতে গোনা ৪-৫টি গরু পালন করেছেন, তারা এ বছর উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে সংশয়ে আছেন। খামারিদের সঙ্গে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ঈদের আর মাত্র ১৭-১৮ দিন বাকী। অথচ অন্যান্য বছরের মতো এখন পর্যন্ত এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী ব্যাপারীদের দেখা নেই। কোরবানিকে সামনে রেখে গরু-ছাগলসহ কোরবানিযোগ্য পশু পালনকারী খামারিদের প্রত্যাশা ছিলো, ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন তারা। কিন্তু তাদের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস।
গরু পালনকারীরা বলছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী কোনো ব্যাপারীর দেখা নেই। তাদের আশঙ্কা এবারের কোরবানির হাটে ক্রেতার অভাবে কম দামে গরু বিক্রি করতে হতে পারে। খামারিদের দাবী, গরু পালন করতে গিয়ে করোনার কারণে বিগত বছরের চেয়ে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অনুযায়ী গরুর দামও বেশী হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে জীবননগর উপজেলাসহ জেলার সবগুলো পশুহাট বন্ধ রয়েছে। আর কোরবানির আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনা নেই। এ কারণে গরু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
জীবননগর উপজেলার বাজদিয়া গ্রামের আবু বক্কর জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ একটি গরুর জন্য দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন খাবার হিসেবে গরুগুলোকে খৈল, ভুষি, কুড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। তিনি বলেন, এবার গরু বিক্রি করে লাভ নিয়ে শঙ্কায় আছি। সবচেয়ে ভয় হলো গরু বিক্রি না করতে পারলে ৭-৮ মাস ধরে খাটানো টাকার অনেকটাই লোকসান হয়ে যাবে। আবার পরের কোরবানি পর্যন্ত এসব পশু পালন করতে অনেক টাকা খরচ হবে।
অনন্তপুর গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষের আয় কমে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কটের কারণে কোরবানির পশুর চাহিদাও আগের চাইতে অনেক কমে গেছে। অনেকে আবার স্বাস্থ্যবিধির কারণে পশু কেনা থেকে বিরত থাকছেন। এসব কারণে এবারে গরুর বাজার নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।
মৃগমারী গ্রামের শাহিন রেজা বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং ধারদেনা করে ৩টি গরু কিনে বাড়িতে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করেছি। গরুগুলো বিক্রি হবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। এবার কোরবানি কম হতে পারে। ঘুঘরাগাছি গ্রামের বিশারত আলী জানান, ৬ মাস আগে এক বস্তা গমের ভূষির দাম ছিলো ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আগে যে খৈলের দাম ছিলো ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু গমের ভূসি ও খৈল না, সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেড়েছে। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার আশঙ্কায় হতাশায় রয়েছি। এছাড়া অন্যবছর কোরবানির দুই মাস আগে থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো ক্রেতা নেই।
সেনেরহুদা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, সারাবছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানীর আগের কিছুদিন সব থেকে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই মাস ধরে নিয়মিত হাট বসতে পারছে না। আর কোরবানীর আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনাও খুবই কম। এই অবস্থায় বাজার খুবই মন্দা থাকবে। কোনোভাবেই ভাল ব্যবসা আশা করা যাচ্ছে না।
জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের কোরবানির জন্য জীবননর উপজেলায় ২৬ হাজার ৭৬ টি গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৪৪৮৩টি, মহিষ ২৯টি, ছাগল ২১৪১০টি এবং ভেড়া ১৫৪টি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More