মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীনদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় অনেক বাড়ি বিক্রি হয়েছে কেউ দিয়েছেন ভাড়ায়

দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘরে এখন অনেকেই বসবাস করেন না। কেউ কেউ বিক্রি করেছেন আবার কেউ দিয়েছেন ভাড়ায়। অনেক সচ্ছল ব্যক্তি রাজনৈতিক বিবেচনায়ও বাগিয়ে নিয়েছিলেন এই ঘর। ঘরের আশপাশ এলাকার জমির মালিকরাও বিভিন্নভাবে অত্যাচার করছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। কোনো কোনো ঘর বসবাসের উপযোগী আর নেই। আবার কোনো কোনো ঘর রয়েছে তালাবাদ্ধ। দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের আবাসন ও সদর উপজেলার ৬২ আড়িয়া গ্রামের আশ্রয়ণ ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে চার ধাপে চুয়াডাঙ্গায় অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ৬৯৫টি বাড়ি দেয়া হয়। তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৭৫, আলমডাঙ্গায় ১৭৫, দামুড়হুদায় ১২৩, জীবননগরে ১৫৩টি মোট ৬২৬টি এবং চতুর্থ ধাপে জেলায় আরো ৬৯টি ফলে সর্বমোট ৬৯৫টি বাড়ি দেয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে, দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের দর্শনা রেলগেট আবাসনে রয়েছে ৬২টি পরিবার। এসব পরিবারের জন্য মাত্র দুটি টিউবওয়েল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক আগেই তা নষ্ট হয়ে গেছে। পাশর্^বর্তী পরানপুর গ্রামের ইউনুস অভিযোগ করে বলেন, যখন ঘরগুলো তৈরি হয় আমি দেখেছি, ঘরগুলোর মেঝেতে কোনো বালু দেয়া হয়নি। বালুর বদলে দেয়া হয়েছে মাটি। ফলে ঘরগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দা আনছার আলী মোল্লা বলেন, এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা চলে গেছেন। কালাম নামের একজন বলেন, এখানকার একজন বাসিন্দা নিজের বাড়িতে চলে গেছেন। তার ঘরে আমি বসবাস করছি। অধিকাংশ বাসিন্দা বলেন, আমাদের যেসব ঘর দেয়া হয়েছে খুবই নি¤œমানের। মেঝেতে কোনো খোয়া ব্যবহার করা হয়নি। বালুর ওপর সিমেন্ট দিয়ে লেপে দেয়া। ফলে সব ঘরের মেঝের বালু বেরিয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬২ আড়িয়া গ্রামের আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২০টি ঘরের মধ্যে ১২টি পরিবার তাদের ঘরে আছে। আর ৮ পরিবারের কেউ সেখানে থাকেন না। এর মধ্যে আবাসনের ছমির হোসেন ১৮ হাজার এবং খবির উদ্দিন ২০ হাজার টাকায় তাদের ঘর বিক্রি করে নিজেদের বাড়িতে চলে গেছেন। আবাসনের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি খলিল মিয়া জানান, তাদের মতো সেন্টু, সফুরা, ছানোয়ার হোসেন, আলী বাক্স, মহিদুল ইসলাম, সালাম, খাদেজা ও জামাল ঘর বিক্রি করে অনেক আগেই চলে গেছেন। আবাসনের বেশ কয়েকটি ঘরে তালা মারা আছে। আবাসনের বাসিন্দা দোলন নেছা বলেন, এখানকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন ঘর ভাড়ায় দিয়ে চলে গেছেন। তার ঘরে এখন থাকেন রূপালী নামের এক নারী। রূপালী জানান, আমাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ঘরমালিক ৪০০ টাকা করে ভাড়া চাচ্ছেন। তা না হলে ১২ হাজার টাকায় বাড়ি কিনে নিতে বলছেন। কিন্তু আমরা টাকা পাব কোথায়? এলাকার কয়েকজন অভিযোগ করেন, এখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঘর পেয়েছিলেন ৬২ আড়িয়া গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তি ছমির ও খবির। তারা ঘর বিক্রি করে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন। আশ্রয়ণের বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, আমাদের যেসব ঘর দেয়া হয়েছে তা একেবারে নি¤œমানের। মেঝেতে কোনো ইট খোয়া নেই। কদিন পরেই মাটি বেরিয়ে পড়ে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। একটু ঠেলা লাগলেই পড়ে যাবে। বাথরুমগুলোর ট্যাংকিতে কোনো জায়গা নেই। সেগুলো কয়েক মাসেই ভরাট হয়ে গেছে। এখন আর ব্যবহার করা যায় না। বাসিন্দা হাজেরা খাতুন বলেন, আমাদের ঘরের পেছনে অনেক জায়গা ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এখানে গাছ লাগাবেন। সেই জায়গা পাশের জমির মালিকরা জোরপূর্বক তাদের জমির ভেতরে নিয়ে নিয়েছে। কিছু বলতে গেলেই ঘর ভেঙে দেয়ার ভয় দেখায়। এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা জানান, চুয়াডাঙ্গার সব আবাসনেই এমন একাধিক সমস্যা আছে। এগুলো খতিয়ে দেখে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র বলেন, এসব ঘরে এখন কারা কিভাবে থাকেন আমাদের কাছে এ তথ্য নেই। যেহেতু অভিযোগের বিষয়ে জানলাম, সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. সাইফুল্লাহ বলেন ‘অনিয়মের বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। ৬২ আড়িয়া আবাসনের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ঘর কেউ ভাড়ায় দিতে পারে না, বিক্রিও করতে পারে না। বিষয়টি আমার কাছে কেউ বিস্তারিত জানালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More