মেহেরপুরে চাল-কুমড়োর বড়ি দিতে ব্যস্ত গৃহিণী ও তরুণীরা

মহাসিন আলী: শীতকে স্বাগত জানিয়ে মেহেরপুরে প্রতিটি ঘরেঘরে চলছে কলাই আর চাল কুমড়ো দিয়ে বড়ি বানানোর মহোৎসব। মেহেরপুর শহর ও গ্রাম-গঞ্জের গৃহিণীদের হাতে তৈরি ডাল-কুমড়োর বড়ি স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে তা পাশের দেশ ভারতসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। তাই শুধু নিজেরা খাওয়ার জন্যই নয়। এ সুযোগে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ পরিবার কলাই-কুমড়োর বড়ি তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
গ্রামের বাড়ির চালে ও মাচাই এখন শোভা পাচ্ছে পাকা শাদা রঙের বড় বড় চাল কুমড়ো। যা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চাল কুমড়ো ও কলাইয়ের বড়ি। এই প্রচ- শীতের ভোরে মেহেরপুর শহর ও পাড়া-মহল্লার মা-বোন, বউ সবাই এখন চাল কুমড়ো ও কলাইয়ের ডাল ধোঁয়া ও বাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ ছুটছেন ঢেঁকির কাছে, কেউবা সাহায্য নিচ্ছেন শিলপাটার। আবার অনেকে সাহায্য নিচ্ছেন বৈদ্যুতিক মেশিনের। সবার উদ্দেশে খাবার টেবিলের বাড়তি স্বাদের জন্য বড়ি তৈরির মূল উপাদান প্রস্তুত করা। শীত মরসুম মানেই গ্রামবাংলার বধূদের নতুন নতুন খাবার তৈরির ধুম। শীতের পিঠা-পায়েশের পাশাপাশি সুস্বাদু ডালের তৈরি বড়ি এই অঞ্চলের সবার কাছে পরিচিত। শীতের দিনে গৃহিণীর রান্না করা প্রতিটি তরকারির সাথে যদি বড়ি না থাকে তাহলে যেন স্বাদের পূর্ণতায় পায় না। সেই বড়ি বানানোর কাজে জেলার প্রতিটি গ্রামের পাশাপাশি শহরের গৃহবধূরাও তাল মেলাচ্ছেন। বড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত কলাইয়ের ডালের সাথে চাল কুমড়োর পরিবর্তে অনেকে মূলা অথবা পেঁপে ব্যবহার করেও থাকেন। গৃহিণীরা জানান, আগামী এক বছর এই বড়িই পূরণ করবে তাদের তরকারির চাহিদা।
মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের ছকিদা খাতুন জানান, এ বড়ি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য মাছ-মাংসের সমান। তাই শীত এলেই গ্রামাঞ্চলের লোকজন বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পাড়ার অনেক পরিবার একত্রিত হয়ে আমরা বড়ি বানাই। ধনী-গরিব সকলেই এই বড়ির প্রতি বেশ দুর্বল। কেননা বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি ভেঙে পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাঁজি করলে এক চমৎকার খাবার তৈরি হয়। এছাড়া বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলু প্রভৃতি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা।
মেহেরপুর শহরের ভূমি অফিসপাড়ার গৃহবধূ মেরিনা আক্তার জানান, প্রতিবছর শীত এলে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের সব পরিবারে অন্য কোনো কিছু না হলেও বড়ি হতে হবে। তাই ঢেঁকি, যাতাকল কিংবা মেশিন যেখান থেকেই হোক না কেন বড়ির উপকরণ প্রস্তুত করেন তারা। পরদিন সকালে পাড়া-মহল্লার গৃহিণীরা বিভিন্ন বাড়ির ছাদে একত্রে দল বেঁধে বড়ি বসানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা যেকোনো মূল্যে শীতের পুরো সময়টা থেমে থেমে বড়ি তৈরি করেন। তিনি আরও বলেন, মেহেরপুরের তৈরি বড়ি শুধু এখানকার মানুষই খায় না, এই বড়ি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। বিদেশিরা মেহেরপুরের বড়ি খেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন।
মেহেরপুর শহরের বড় বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, মূলত শীতের মরসুমে কুমড়ো বড়ির বাজার ধরতে আর্শ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ এই তিন মাস তাদের পরিবারগুলো কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। তিনি আরও জানান, ২-৩ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি। এ কাজে নারীদের শ্রম ও প্রাধান্য বেশি। বর্তমানে এ অঞ্চলের হাট-বাজারে প্রতি কেজি কুমড়া বড়ি পাইকারি-খুচরা ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে নিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি ছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এ কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে থাকেন।
বিজ্ঞজনেরা বলেন, সম্প্রতিক সময়ে ডাল ও মসলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মেহেরপুরে কুমড়ো বড়ি তৈরিতে নিয়োজিতরা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য স্বল্পসুদে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি করছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More