রিকশার প্যাডেল ঘুরালেই জীবনচাকা ঘোরে বৃদ্ধ ভোলা শেখের

আফজালুল হক: ভোলা শেখ। বয়স ৭৭ ছুঁইছুঁই। বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। দু’মুঠো ভাত আর অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধের খরচ জোগাতে রিকশা চালাতে হচ্ছে তাকে। তবে তিনি এখন ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারেন না। কিছুক্ষণ রিকশার প্যাডেল ঘুরোলে দম আটকে যায় তার। তখন হেঁটে হেঁটে রিকশা টেনে নিয়ে যেতে হয় তাকে। তবুও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করেন তা দিয়েই চলে ভোলা শেখের সংসার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়ার মৃত বিনোদ আলীর ছেলে ভোলা শেখ ওরফে মনভোলা। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন বয়সের ভারে আর রিকশা চালাতে পারেন না। স্মৃতিশক্তিও লোপ পেয়েছে। তিনি দুই ছেলে-মেয়ের জনক। রিকশা চালিয়ে মেয়ে শিউলী খাতুন ও ছেলে আব্দুল হালিমকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি আর ছেলে ভ্যান চালিয়ে যতটুকু পারেন বাবা-মায়ের দেখাশোনা করেন।
স্থানীয়রা জানান, ভোলা শেখ খুব দরিদ্র। বাবা ও শ্বশুরের সহযোগিতায় কেনা দুই কাঠা জমির ওপরে বসবাস করছেন। রিকশা চালিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছেন। ভোলা শেখ অর্ধেক বেলা রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকম চলে। এরপর তার স্ত্রী অসুস্থ। হার্টের সমস্যা। ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না ভোলা শেখ। তিনি খুব ভালো মনের মানুষ। তিনি এই বয়সেও কর্ম করে সংসার চালাচ্ছেন। এলাকার অনেকেই তার পরিবারকে সহযোগিতা করেন।
ভোলা শেখের স্ত্রী শাহীজান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, কয়েক বছর ধরে আমার স্বামী কিছুটা স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। কোনো কিছুই ঠিকমত মনে রাখতে পারেন না। আবার ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না। আমি হার্টের রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন গড়ে দেড়শ টাকার ওষুধ লাগে। আমার স্বামী সরকার থেকে প্রতি তিন মাস পরপর ১৫শ টাকা করে বয়স্ক ভাতা পান। বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমার ও তার ওষুধের খরচ জোগাতে এই বয়সে রিকশা চালাতে বাধ্য হয়েছেন। প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা যা উপার্জন করেন তা দিয়ে ওষুধটা কেনা হয়। আবার কোনো দিন টাকার অভাবে ওষুধ খাওয়া হয় না।
তিনি বলেন, বর্তমানে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় সংসারটা চলছে না। আমরা চাই সরকার ও সমাজের সবাই একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক। আমার স্বামীর বয়স বাড়ছে। তাই সব সময় চিন্তা হয় তার জন্য। বৃদ্ধ ভোলা শেখ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমার শরীর আর আগের মতো ঠিক নেই। শরীরে আগের মতো জোর পাই না। তবু কারও কাছে হাত না পেতে রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকম চলে। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই রিকসা চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি আর এখন রিকশা চালাতে পারি না। অর্ধেক বেলাও রিকশা চালাতে পারি না। এখন রিকশা চালালে দম আটকে যায়। তবুও কিছুই করার নেই। সরকার থেকে তিন মাস পরপর ১৫শ টাকা আমাকে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছে। এতে কি আর সব হয়? আমার স্ত্রীর হার্ট ব্লক। প্রতিদিনই গড়ে ১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। তাই ওষুধের জন্য রিকশা চালাতে হচ্ছে। ছেলেটা ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করে এর মধ্যেও টেনেটুনে তার সংসার চালিয়েও আমাকে দেখাশোনা করে। সরকারিভাবে আরও কোনো সহযোগিতা হলে ভালো হতো।
আলুকদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ভোলা শেখ খুবই দরিদ্র। বয়সের কারণে অনেকটা স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। স্ত্রীর ওষুধের খরচ যোগাতে রিকশা চালাচ্ছেন এই বয়সে। তার এই সংগ্রামী জীবনকে স্যালুট জানাই। তিনি সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এখনকার অবস্থা বিবেচনা করলে এ টাকায় কিছুই হয় না। তার স্ত্রীর ওষুধ কিনতেই চলে যায় প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টাকা। তার জন্য এলাকার সবার সহযোগিতা দরকার।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তার যেহেতু বাড়ি আছে। পাশাপাশি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তিনি আবেদন করলে আমি এককালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More