লালন সাঁইজির গান আধ্যাত্মিকতার আলো ছড়াচ্ছে

চুয়াডাঙ্গা শহর বাউল একাডেমির উদ্যোগে পূর্ণিমা তিথিতে সাধু মেলা অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার শহর বাউল একাডেমির উদ্যোগে পূর্ণিমা তিথিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাধু মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি চন্দ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত চলে দেশীয় ও গ্রামবাংলার গান; লালন সাঁইজির গান ও দেশীয় যন্ত্রসঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার আলো ছড়ানোর কাজ।

চুয়াডাঙ্গা শহর বাউল একাডেমির সভাপতি বশির উদ্দিন আহমেদ হিতু খ্যাপার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার সিনিয়র রিপোর্টার চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক -নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক ইসলাম রকিব ও শহর সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আধ্যাত্মিকতার চমৎকার উদাহরণ দিয়ে সরদার আল আমিন বলেন, জল আর পানির মধ্যে আপাতত কোনো পার্থক্য নেই; আমরা মানব সমাজ জাতিই এটির মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছি। কিন্তু বাউলরা এ দুটির মধ্যে পার্থক্য হতে দেয় না। আর পার্থক্য করতে দেয় না বলেই তারা বলে নিজেকে নিজে চেনো, নিজেকে জানো। নিজের মধ্যেই যে আছে তাকে আগে চেনো। যারা নিজেকে চেনে তারা এই সমাজকে সুন্দর একটি জায়গায় নেয়ার জন্য চেষ্টা করে। খুব অবহেলিত জায়গায় থেকেও তাদের মাঝে আসতে পেরে সত্যিই আমার খুব ভালো লাগছে। যদিও কাব্যিকভাবে পূর্ণিমা তিথির কথাটি আছে; কিন্তু সচরাচর এই শব্দটিকে ব্যবহার করা হয় না বা ব্যবহৃত হয় না। শহর বাউল একাডেমি যে এমন একটি সুন্দর কাব্যিক কথা ‘পূর্ণিমা তিথি’ তাদের বাউল সংগীত চর্চার দিন বা তিথি হিসেবে বেছে নিয়েছে এটি সত্যিই চমৎকার। বাউল সম্প্রদায় একটি মোমবাতির মতো। তারা নিজে গলে আগুন বানিয়ে অন্যকে আলো দিয়ে সহযোগিতা করে। এভাবে যুগের পর যুগ ধরে বাউল সমাজ তাদের আলো ছড়াক সেটি আমি আশা করি। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তাদের পাশেও যে দাঁড়ানো দরকার; সেটি কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না।

সরদার আল আমিন শহর বাউল একাডেমিকে তাৎক্ষণিক একটি সাউন্ড সিস্টেম উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে যেমন সম্মানিত করেছে; তেমনি শহর বাউল একাডেমির পক্ষ থেকে সরদার আল আমিনকে তাৎক্ষণিক বিরোচিত ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

শহর বাউল একাডেমির সভাপতি বশির আহমেদ হিটু বাউল বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুসরণে শহর বাউল একাডেমি চুয়াডাঙ্গার উদ্যোগে স্থানীয় ও আগত বাউল সাধকদের নিয়ে মাসিক আয়োজনে পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত সাধু মেলা আয়োজন করে থাকে। চুয়াডাঙ্গা পশু হাটপাড়া শশ্মানঘাট সংলগ্ন একাডেমির নিজস্ব কার্যালয় প্রাঙ্গণে বাউলদের জন্য বিভিন্ন সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র চর্চাও নিয়মিত করা হয়। সাধু মেলায় উপস্থিত ছিলেন এপার বাংলা ওপার বাংলার প্রখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ মনোয়ার হোসেন খোকন।

এ সময় সংগীত পরিবেশন করে ইলিয়াস বাউল, মায়া উদাসী, পালা শিল্পী ওস্তাদ রেজাউল করিম, জুলিয়াস বাউল, শাওন কুমার রায়, শিশির বাউল, কালাম বাউল, সোবারেক বাউল, জাহাঙ্গীর বাউল, আব্দুল হালিম, জাহিদুল বাউল, আয়নাল বাউল মমিনুল ইসলাম, লিটন বাউল। যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতায় ছিলেন বংশীবাদক মনোয়ার হোসেন খোকন (যিনি সুরের জাদুতে দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করেন), বোরহানউদ্দিন বিশ্বাস, বাংলা ঢোলে আব্দুল্লাহ, দোতারা সুকাল বাউল, খমকে জান আলী। সংগঠনের সভাপতি বশির আহমেদের সঞ্চালনায় স্থানীয় বাউল সাধকগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বুড়ি ফকিরাণী, রোকেয়া ফকিরানী, তারা চাঁদ শা ও শহিদুল ফকিরসহ অনেকে।

এ সময় বাউল ভাব বাণীতে এলাকার পরিবেশ নির্মল সুন্দর হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান শেষে শহর বাউল একাডেমি সরোজগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়; ওস্তাদ রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক এবং যুগ্মআহ্বায়ক হাসান আলী শিশির বাউল ও কালাম বাউল। তবারক বিতরণের মাধ্যম দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More