ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার করা শিক্ষার্থীকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে মরদেহের ভিসেরা রিপোর্টে। যে কোনোভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার লাশ পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো অর্থাৎ পানিতে ফেলার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল বলে ভিসেরা রিপোর্টের বরাতে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। নিহত সাজিদ আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ এবং জিয়া হলের ১০৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। সাজিদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ার একটি মাদরাসার সুপারেনডেন্ট। গত ১৭ জুলাই বিকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পাশের একটি পুকুরে ভেসে ওঠে সাজিদের লাশ। পরে তা উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পুলিশ। পরদিন সকালে সেখানে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তবে সাঁতার জানা সাজিদের পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটনাটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি সহপাঠী ও পরিবারের স্বজনরা। সাজিদের এ মৃত্যুকে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকা-’ দাবি করে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে আসছিল তারা। এ দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ার মোবাইলে বলেন, “শুরু থেকেই আমার ছেলের মৃত্যুকে রহস্যজনক বলেছিলাম। আমার সাঁতার জানা ছেলে পানিতে ডুবে মারা যাবে কীভাবে? আমার পরিবার এখনও ছেলের শোকে বিধ্বস্ত বিপন্ন। আমি এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।” এ ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও এতোদিন অপেক্ষায় ছিলেন সাজিদের মরদেহের ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পাওয়ার। পরে রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে ভিসেরা রিপোর্ট পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ভিসেরা রিপোর্টে ‘হোমিসাইডাল ইন এ নেচার’ বা হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ময়নাতদন্তের সময়কাল থেকে ৩০ ঘণ্টা আগে সাজিদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। সেই হিসেবে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় ১৬ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে। পুলিশ সুপার মিজানুর আরও বলেন, “ভিসেরা রিপোর্টে হত্যাকা-ের প্রমাণ পাওয়ায় এখন সাজিদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে তদন্ত শরু করা হবে।”
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাহিনুজ্জামান বলেন, “এর মধ্যে ইবি প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি সাজিদ আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এমন সন্দেহের মতামত দিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী এটি সন্দেহাতীত হত্যাকা- প্রমাণিত হয়েছে। এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন এবং জড়িতদের গ্রেফতারে পদক্ষেপ নিবেন।”
এসব বিষয়ে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন আরও যুক্ত করে বলেন, “সব রকমের পানিতে ডোবা মৃত্যুই যেন ময়নাতদন্তের আওতায় আসে সে বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।”
এদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.