আলমডাঙ্গার বৈদ্যনাথপুরে সড়কে বাঁশ বেঁধে পথচারীদের গতিরোধ দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভ্যানচালক সহ ৫ যাত্রীর সর্বস্ব লুট
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:আলমডাঙ্গায় ভোররাতে ব্যাটারি চালিত ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে একদল অস্ত্রধারী দুষ্কৃতকারীর কবলে পড়েছেন ট্রেনযাত্রী গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামের জাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর সূর্য ওঠার আগে আলমডাঙ্গা-হাটবোয়ালিয়া সড়কের বৈদ্যনাথপুর কবরস্থানের আগে জামতলায় এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভ্যান চালকসহ ৫ জন যাত্রীর হাত-পা বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চালকের ভ্যানটিও নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
ভুক্তভোগী গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামের কাউসার আলির ছেলে জাহিদ হোসেন মাথাভাঙ্গাকে জানান, ঢাকা থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আমি আমার মা বিলকিছ বেগম, স্ত্রী হেনা ও দুই সন্তান নিয়ে ট্রেনে চেপে ভোর পৌনে ৫টার দিকে আলমডাঙ্গায় পৌঁছায়। আলমডাঙ্গা স্টেশনে নেমে একটি ব্যাটারিচালিত পাখি ভ্যান চারশত টাকায় ভাড়া করে গাংনীর শালদহ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই। হারদী – কুয়াতলা মাঠের মধ্যে ফজরের আজান দেয়। কিছুক্ষণ পর বৈদ্যনাথপুর কবরস্থানের কাছাকাছি রাস্তার উপর বাঁশ বেঁধে রাখা দেখতে পেয়ে ভ্যান চালক ভ্যান থামায়।এ সময় সেখানে আগে থেকে ওত পেতে থাকা একদল দেশীয় অস্ত্রধারী দুষ্কৃতকারী আমাদের ভ্যানটির গতিরোধ করে রাস্তার পাশের একটি বাঁশবাগানের পিছনে নিয়ে আমাদের হাত-পা বেঁধে আমাদের কাছে থেকে নগদ তিন হাজার টাকা ও তিনটা মোবাইল ফোন ও কানের একটি ইমিটেশনের দুল ছিনিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় তারা ভ্যানচালকের ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যানটিও নিয়ে পালিয়ে যায়।
জাহিদের মা বিলকিছ বেগম বলেন, ওরা চারজন ছিল। সবার মুখ মাফলার বাঁধা ছিল। একজনের হাতে রামদা, দুইজনের হাতে বড় বড় ছুরি ও একজনের হাতে চাকু ছিল।তারা জাহিদের বৌ হেনা , দুই বাচ্চা ও আমাকে বাগানের মধ্যে রেখে জাহিদ ও ভ্যানচালকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে টাকা , মোবাইল ও বিটার বৌর কানের দুল ও ভ্যান নিয়ে চলে যায়।
ওরা চলে যাওয়ার পর আমি ও জাহিদের বৌ, জাহিদ ও ভ্যানচালকে মুক্ত করে মাঠের ভিতর থেকে রাস্তায় আসি। এই সময় আমলডাঙ্গা থেকে আসা একটি ভ্যানে করে আমরা হাটবোয়ালিয়া বাজারে আসি। এসময় ভ্যান চালকের আহাজারিতে মানুষজন ডাকাতির বিষয়টি জানতে পারে।
ভ্যানচালক চুয়াডাঙ্গা নূর নগরের মতি তিনি বর্তমানে আলমডাঙ্গা স্টেশন পাড়ায় থাকেন। তিনি বলেন, সারা রাত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে ভোরবেলা প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাচ্ছিলাম। ডাকাতরা সব কেড়ে নিল, আমার শেষ সম্বল পাখি ভ্যানটাও নিয়ে গেল। এখন আমি খাব কী?” তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে কাঁদতে থাকেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটা বাঁশ পড়ে আছে। যেটার একমাথা কলার শুকনো ছুতা দিয়ে পাশের বাবলা গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। রাস্তার পাশের মাঠে ভ্যানের চাকার দাগ দেখা গেল। স্থানীয় কৃষক রহিম মিয়া ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলেন। দেখা গেল ভূট্টা গাছ পায়ের চাপে ভেঙে গেছে। যে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল তার সামনের কচুগাছ গুলো ভাঙ্গা ও তার পাশে কিছু শুকনো কলা পাতা ও কাঁচা কলা পাতা পড়ে আছে।
সকাল দশটায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান ও আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বানী ইসরাইল।
ওসি বানী ইসরাইল মাথাভাঙ্গাকে বলেন, এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।অপরাধীদের শনাক্ত করতে এবং লুণ্ঠিত মালামালসহ ভ্যানটি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে।
ভোররাতে জনশূন্য রাস্তায় এমন পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আলমডাঙ্গা – হাটবোয়ালিয়া সড়কের এই এলাকাটিতে মাঝে মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। পুলিশী টহল জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.