আলমডাঙ্গায় দাঁতের অপারেশন, শ্বাসনালী ফুটো করায় পাইকপাড়ার রুবেলের মৃত্যু

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় দাঁতের সংক্রমণ রোগের চিকিৎসা করতে এসে রুবেল হোসেন (২৭) নামের এক যুবকের মৃতু্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আলমডাঙ্গার মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিকে ওই রোগী এলে ডাক্তার অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়ার এক পর্যায়ে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রুত তাকে ফাতেমা ক্লিনিকে নিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য শ্বাসনালী ফুটো করে কুষ্টিয়ায় রেফার্ড করা হলে পথিমধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকসূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রুবেল আহমেদ জনি অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে খুলনায় চাকরী করেন। পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তার দাঁতের মাড়িতে সংক্রমণ রোগে আক্রমণ করে। বেশকিছুদিন ধরে তার দাতের মাড়িতে পুঁজ জমে। তিনি এই সংক্রমণ চিকিৎসার জন্য আলমডাঙ্গার মর্ডাণ ডেন্টাল সার্জারি ক্লিনিকের ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোপেসিয়াল সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার আব্দুল হান্নানের কাছে আসেন। তিনি রোগীর চোয়ালের নীচে পুঁজ জমে থাকার কারণে শ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে নিশ্চিন্ত হন। রোগীর চিকিৎসার জন্য চোয়াল অবশ করার এক পর্যায়ে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রোগীকে দ্রুত স্থানীয় ফাতেমা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হয়। পরে অ্যানেসথিশিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুস সালামকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। এরপর ডেকে নেয়া হয় নাক কান গলা সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খালিদ মাহমুদকে। তৎক্ষণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তিনি এসময় শ্বাসপ্রশ্বাস একেবারেই নিতে পারছিলেন না। এ সময় শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার জন্য শ্বাসনালী (ট্রাক্সওসটমি) ফুটো করে কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। এতেও কাজ হয়নি। রোগীর পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়! ওই পরিস্থিতিতে রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে কুষ্টিয়া মান্নান হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে মর্ডান ডেন্টাল ক্লিনিকের ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোপেসিয়াল সার্জারি বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান জানান, রোগী দাঁতের সংক্রমণ থেকে চোয়ালের নীচে পুঁজ জমে। সেলুলাইচ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অক্সিজেন ও আনুসাঙ্গিক সাপোর্টের জন্য ফাতেমা টাওয়ারে নেয়া হয়। তারপর শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে শ্বাসনালী ফুটো করে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। এ অপারেশনের জন্য অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সালামের উপস্থিতিতে ইএনটি ডা. খালিদ ও আমি চেষ্টা চালিয়ে এয়ারওয়ে স্টেবল করা হয়। তারপরও রোগী খারাপের দিকে গেলে তাকে আইসিইউতে রেফার্ড করা হয়।

ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলমগীর হোসেন জনি জানান, ব্রঙ্কোস্পাজম অথবা লোকাল অ্যানেসথিসিয়ার কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।

এ ধরণের অপারেশন স্থানীয় ক্লিনিকে করা ঠিক হয়েছে কি-না তা জানতে চাইলে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, এটা ছিলো জীবন রক্ষার প্রসিডিউর। আসলে তিনি লার্ডউইক অ্যানজাইনাতে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট নিয়েই ডাক্তারের নিকট এসেছিলেন। দাঁতের নীচে চোয়ালে পুঁজ ছিলো। প্রথমে পুঁজ বের করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ওই সময় শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ফাতেমা ক্লিনিকে নিয়ে ইএনটি ডাক্তারের মাধ্যমে শ্বাসনালী ফুটো করে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থার চেষ্টা করা হয়। এ সময় রোগী কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হন।

রোগীর ভগ্নিপতি আব্দুল্লাহ জানান, প্রচুর পুঁজ রক্তের কারণে রোগী শ্বাস নিতে কষ্ট পেতো। গলা ফুলে কথা বলতে পারতো না। ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেলে ডাক্তার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে লাইফ সাপোর্ট কুষ্টিয়ায় নেয়ার পথে মারা যায়। এ ব্যাপারে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে, কুষ্টিয়া থেকে লাশ গ্রামে নিয়ে এলে স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি শুরু হয়। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম পরিবারের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তাদের  কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেয় পুলিশ। দুপুরে লাশের দাফন সম্পন্ন হয়।

দরিদ্র রফিকুল ইসলাম দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে রুবেল ছিলো ছোট। রুবেল আহমেদ জনি ছিলো অত্যন্ত মেধাবী। পড়াশুনা শেষ করে বিসিএস দেয়ার চেষ্টা করছিলো। অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে খুলনায় চাকরি করছিলেন। একমাত্র বোনটি বিবাহিত। উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবারটি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More