আলমডাঙ্গায় স্কুল প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া ভাঙা টিনের ঘর ভাঙা বেঞ্চ চেয়ার-এটিও সরকারি স্কুল
সাইদুর রহমান: ভাঙা টিনের ঘর। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ভাঙাচোরা কিছু বেঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল। এক ঘরের তিনটি শ্রেণি কক্ষ। মাটির মেঝে। নিচু মাঠ। এ রকম আরও অনেক দৈন্যদশা নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলার আলমডাঙ্গার উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিদ্যালয়টির নাম কানাইনগর-শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি অজো পাড়াগাঁয়ের এ স্কুলটিতে। অথচ কানাইনগর-শিবপুর গ্রামের অন্তত ১২০ জন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়ালেখা করছে। পুরো বিদ্যালয়জুড়ে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, কানাইনগর ও শিবপুর গ্রামের মাঝামাঝি ১৯৯০ সালে ৩৩ শতক জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদান করেন সামছদ্দিন মোল্লা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ সুরাতুজ্জামানের সহযোগিতায় আলী হোসেন মোল্লা, হায়দার মোল্লা, ইদ্রিস আলী ও হাসেম আলীর প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্কুলটির দুই কিলোমিটার আশপাশে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। প্রথমদিকে এটি ছিলো রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। আর শিক্ষক আছেন চারজন।
সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকদের বসার ছোট্ট একটি আধাপাকা ঘর থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের বসার ক্লাসরুমটি উপরে টিন আর জরাজীর্ণ টিন ও চাটাই দিয়ে ঘেরা একটি ঘরে ৩টি ক্লাসরুম। পুরো ঘরজুড়ে জীর্ণতার ছাপ। এর মধ্য দুটি রুমে একপাশে একটি চেয়ার ও ছোট একটি টেবিল পেতে বাকি জায়গায় ৭ থেকে ৮ টি বেঞ্চ রাখা শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষকদের বসার চেয়ার-টেবিলগুলোও ভাঙা এবং নড়বড়ে। পাকা মেঝে না থাকায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ এবং শিখন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়নি। আর একটি রুমে মাদুর পেতে সেখানেই চলছে পাঠদান। ১৯৯০ সালে স্থাপিত পর ২০১৪ সালে জাতীয়করণ হলেও বিদ্যালয়টিতে নেইকোনো ভবন, চেয়ার, টেবিল বা স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা।
শিবপুর গ্রামের ইসরাইল হোসেন, ইকতিয়া হোসেন, ইয়াকুব আলী, বিপুল হোসেন বলেন, এ বিদ্যালয়ে আমাদের দুই গ্রামের নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা পড়ে। শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে তেমন কোনো খেলার মাঠ নেই। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। বর্ষাকালে স্কুলের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। এমনকি নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ও শৌচাগারও (টয়লেট) স্বাস্থ্য সম্মত নয়। কয়েক বছর আগে শিক্ষকেরা নিজস্ব উদ্যোগ ও এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি টিউবয়েল ও শৌচাগার নির্মাণ করে। এছাড়াও বর্ষাকালে স্কুল বাউন্ডারিসহ স্কুলে আসার রাস্তাটি কাদা-জলে একাকার হয়ে চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এই দুর্ভোগের কারণে বর্ষাকালে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে চায় না।
বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে ৪ জন শিক্ষক উপস্থিত হলেও সব ক্লাস মিলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিলো ২০ থেকে ২৫ জন। যা দিয়েই চলছিলো পাঠদান। দুপুরের সিফটে আবারও ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি হবে বলে শিক্ষকরা জানান। দৈনিক মাথাভাঙ্গার পক্ষ থেকে এতো ছাত্রছাত্রী অনু-উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকগণ বলেন, বর্ষাকাল আসলেই কাদা-জলে এই সড়কের যে কি অবস্থা হয়। দুই গ্রামের কমলমতি শিশুরা রাস্তার এতো কাদা পানি পার হয়ে স্কুলে আসতে চায় না। যার কারণে স্কুলে উপস্থিত হার বর্ষার সময় খুবই কম হয়। লেখাপড়াতেই পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
কানাইনগর শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর ও সহকারী শিক্ষক ইউনুস আলী বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত আমাদের বিদ্যালয়টি এবং আমাদের বিদ্যালয়ের আসা-যাওয়া রাস্তাটি। আমরা শুনেছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান; বিভিন্ন দাঁতা সংস্থার সহায়তায় স্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগারও (টয়লেট) ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করেন। আমরা দাবি জানাবো সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা আমাদের অবহেলিত স্কুলটির দিকে যেন সু-নজর দেয়। তারা আরও বলেন, শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ভবনের আবেদন করা হয়েছে। ভবনটি নির্মান হলে অনেকাংশে সমস্যা কমবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.