আলমডাঙ্গা-গাংনী ও কালীগঞ্জে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ মিছিল ; লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউনে দোনানপাট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, মেহেরপুরের গাংনী ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের বেশ পূর্বেই ঈদের বেচাবিক্রির জন্য তারা কাপড় ও পোশাক সংগ্রহ করে থাকেন। এ বছরও বেশ আগেভাগেই লাখ লাখ টাকার মাল সংগ্রহ করেছেন। এখন লকডাউন দেয়া হলে সেগুলো বিক্রি করবেন কবে। কারণ সিটকাপড় ও শাড়ি এখনই বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। আগেভাগে ক্রেতারা কেনেন তৈরির ঝামেলা আছে বলেই। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবি করেন।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, লকডাউনের প্রথম দিনেই আলমডাঙ্গায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দৃড় অবস্থান গ্রহণ করে। পরে প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদেরকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গার গার্মেন্টস্পট্টির বৃহত্তর গার্মেন্টস ও কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা লকডাউনের বিরুদ্ধে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় ব্যবসায়ীরা লাকডাউন উপেক্ষা করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার ম-ল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীর ও থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেসময় উত্তেজিত ব্যবসায়ীরা লকডাউন না মানার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবস্থা শান্ত করার চেষ্টা করেন।

বৃহত্তর কাপড়পট্টি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি গোলাম রহমান সিঞ্জুল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, রমজানের বেশ পূর্বেই ঈদের বেচাবিক্রির জন্য তারা কাপড় ও পোশাক সংগ্রহ করে থাকেন। এ বছরও বেশ আগেভাগেই লাখ লাখ টাকার মাল সংগ্রহ করেছেন। এখন লকডাউন দেয়া হলে সেগুলো বিক্রি করবেন কবে। কারণ সিটকাপড় ও শাড়ি এখনই বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। আগেভাগে ক্রেতারা কেনেন তৈরির ঝামেলা আছে বলেই। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে রাখার দাবি করেন। এসময় ব্যবসায়ীরা নানা সেøাগান দিতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন যদি হাজার হাজার শ্রমিক নিয়ে শিল্প কারখানা চলতে অসুবিধা না থাকে, তাহলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখতে পারবেন না কেন?

এসময় আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার ম-ল ব্যবসায়ীদের দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। এসময় আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীরও সকল ব্যবসায়ীকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মহাবিপদের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অনুরোধ করেন। শেষে ব্যবসায়ীরা শান্ত হন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লকডাউনে দোনানপাট বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের দোকানদার ও তাদের কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে লকডাউন শিথিল করার দাবি জানান তারা। তবে লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে গাংনী থানা পুলিশের কয়েকটি দল গাংনী বাজারে টহল শুরু করে। রাস্তাঘাটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও অন্যান্য যানবাহন চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাজারের মার্কেটগুলো খোলা শুরু করেন দোকানিরা। এসময় পুলিশের টহল দলের সদস্যরা তাতে বাধা দেয়। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে দোকানিদের প্রতি অনুরোধ করেন পুলিশের ওই দলের সদস্যরা। এ নিয়ে পুলিশের সাথে দোকানিদের মৃদ ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে এসএম প্লাজা, শফি মোহাম্মদ টাওয়ার, আমিরুল মার্কেট, স্মরণীকা শপিং মলসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মিছিলটি গাংনী শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন বাজার কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বুলু। বক্তব্যে বাজার কমিটি সভাপতি বলেন, গত বছরের লকডাউনের ক্ষতি এখনো পূরণ হয়নি। আবার লকডাউনে দোকানি ও কর্মচারীরা খাবে কী? এখন লকডাউন চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। সামনে রমজান মাস। রমজান ও ঈদে দোকানিদের ব্যবসার অনেক কিছুই নির্ভর করে। তাই লকডাউন শিথিল করার কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে লকডাউনে বাস ছাড়া সব রকম যানবাহন চলতে দেখা গেছে। বেশিরভাগ চায়ের দোকান বন্ধ থাকলেও নিত্যপণ্যের দোকান খোলা ছিলো; ক্রেতা সমাগম ছিলো কম। জরুরি কাজে ঘর থেকে বের হওয়া এবং কর্মজীবী মানুষের উপস্থিতি ছিলো আগের মতোই। প্রশাসন ও পুলিশের কড়াকড়িতে মাস্ক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। করোনা থেকে বাঁচতে নয়; পুলিশের প্যাদানি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরা হচ্ছে বলে জানান মাস্ক ব্যবহারকারী কয়েকজন।

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে লকডাউনের বিরুদ্ধে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় প্রায় দেড়ঘণ্টা সড়কের উপর বসে অবরোধ করেন ব্যবসায়ীরা। এর কিছুক্ষণ পর কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমানের সাথে ব্যবসায়ী নেতারা আলোচনা করে দুপুর ২টার দিকে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এরপর সড়ক অবরোধ শেষে অবিলম্বে লকডাউন প্রত্যাহার দাবিতে ব্যবসায়ীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে শেষ হয়। মিছিলে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে অবৈধ লকডাউন মানি নাসহ বিভিন্ন সেøাগান দেন ব্যবসায়ীরা। এসময় বক্তব্য রাখেন কালীগঞ্জ উপজেলা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম আহবায়ক ইনদাদুল হক ইনতা, মো. আব্দুল হান্নান, জহুরুল হক বিপ্লব, আক্তার হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সারাবছর তেমন বেচাকেনা থাকে না ব্যবসায়ীদের। ঈদেই একটু ভালো বেচাকেনা হয়। এর আগের ঈদেও ব্যবসায়ীরা লকডাউনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান। অবিলম্বে লকডাউন প্রত্যাহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান তারা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More