আলমডাঙ্গা ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগী : ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

শরীফুল ইসলাম রোকন: আলমডাঙ্গার ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকট আর অব্যবস্থাপনার কারণে বেহাল দশা। এতে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ গ্রামীণ শিশু ও নারীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি ছোট কক্ষে চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে। এতে চিকিৎসক ও রোগীদের উভয়ের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বাদেমাজু গ্রামে ১৯৭৮ নির্মাণ করা হয় ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’। প্রায় ১০ বছর ধরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে প্রদান করা হয় স্বাস্থ্য সেবা। গত এক বছর আগে উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার অবসর গ্রহণ করায় জনবল শূণ্য হয়ে পড়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শুধুমাত্র পরিদর্শক ছাড়া আর কেউ আসেন না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আশপাশ ও দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের।
জানা গেছে, ডাউকি ইউনিয়ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি একসময় এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্থান ছিলো। কিন্তু বছরের পর বছর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটির দেয়ালে ফাটল ধরেছে, ছাদের পয়েস্তা ভেঙ্গে পড়ছে, ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে এবং মেঝেও ভেঙে গেছে। ফলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। বর্তমানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কক্ষগুলোতে সাপ, বেজিসহ বন্য প্রাণি বাসা বেঁধেছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু না থাকলেও কয়েক বছর আগে জনস্বাস্থ্য প্রোকৌশল অধিদপ্তর বাউন্ডারি প্রাচীর নির্মাণ করেছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির পাশেই ডাউকি ইউনিয়ন পরিষদ। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি অপ্রসস্থ কক্ষে অস্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। এখানে গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা, ডেলিভারি, প্রসবসেবা, মা ও শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ওষুধ সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, রোগী চলাচলের জন্য ভালো কোনো যাতায়াতের সুবিধা নেই। ১৯৭৮ সালে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলেও নির্মাণ করা হয়নি যাতায়াতের রাস্তা। কাঁদা ও ধুলোমাখা রাস্তা পেরিয়ে অনেক কষ্টে রোগীদের যেতে হয়। বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায় যাতায়াতের রাস্তা। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রসূতি রোগীদের জন্য এই পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত কষ্টকর।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ৫ জন কর্মরত থাকার কথা। একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা এবং একজন এমএলএস, ও একজন আয়া । কিন্তু এই কেন্দ্রটিতে মাত্র একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ছবেদা খাতুন বলেন, এই এলাকার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র এটি। এখানে শুধুমাত্র নারীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। আশপাশে এমন আর কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। কিন্তু সংস্কারের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সেবা দিয়ে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার একমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির এমন অবস্থা খুবই দুঃখজনক। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ ও যাতায়াতের রাস্তাটি প্রয়োজন।’
পল্লি চিকিৎসক শেখ শফিউল আলম সৌমিক জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সমস্যা দীর্ঘদিনের। গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে চালু করা হয়েছে ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। বর্তমান কেন্দ্রের ভবনের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবকাঠামো ভবন ও বাসভবন দুটিই একেবারই ব্যবহার অনুপোযোগী সামান্য বৃষ্টি হলেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়া আসার রাস্তায় হাঁটু পানি জমে থাকে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সেবা প্রদান করা হয়। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় যেমন চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে তেমনি যারা দায়িত্বে আছেন তাদের আবার বাড়তি চাপ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া মূল্যবান ওষুধপত্রসহ সরঞ্জামাদি ঝুঁকির মধ্যে রেখে কেন্দ্রটি পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধুসিক অবকাঠামো ভবন ও বাসভবন দুটিই প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ডাউকি ইউপি সদস্য মানোয়ার হোসেন জানান, “আমরা অনেকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি। নতুন ভবন নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন।”
আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অ.দা.) ডা. মো. তরিকুল ইসলাম জানান, ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থা খুবই খারাপ। মূলভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ভাবে পড়ে আছে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদটি শূণ্য রয়েছে। ইতোমধ্যেই ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নতুন ভবনের জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। কেন্দ্রটির নতুন ভবন ও যাতায়াতের রাস্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম জানান, ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির দূর্দশার বিষয়টি জেনেছি। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অধিকাংশ পদই শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। ডাউকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দ্রুত সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এলাকাবাসী দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ, নিরাপদ, আধুনিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছে, যাতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More