আলমডাঙ্গা মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ী সাদরে আলম করোনা আক্রান্ত ছিলেন : আরও শনাক্ত ৫১

চুয়াডাঙ্গায় আরও ৫১ জনের করোনা শনাক্ত : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মধ্যবয়সী নারীর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিশ্ব মহামারি ভয়াবহ ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ ভয়াবহ আকারে সংক্রমিত হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি যেমন সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনই যেহারে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তার প্রায় অর্ধেকেরই করোনা পজিটিভ হচ্ছে। উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যারা মারা যাচ্ছেন তাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টও পজিটিভ হচ্ছে। গতপরশু রাতে ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যাওয়া মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ী সাদরে আলমের করোনা পজিটিভ হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারী বুধবার দুপুরে মারা গেছেন। এ দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবেই করোনা আক্রান্ত রোগী ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৭ জন। অপরদিকে গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আরও ৫১ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলারই ৩৬ জন। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৩০ জন। শুধুমাত্র কোর্টপাড়া আর হাসপাতালপাড়াতেই শনাক্ত হয়েছে ১৩ জন।

বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ১০২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এদিন চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে পূর্বের ৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ৫১ জনের করোনা পজিটিভ হয়। নতুন শনাক্ত দিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯শ ৪২ জনে। বুধবার আরও ৩০জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৪শ ৭৪ জন। নতুন আক্রান্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৩৬ জনের মধ্যে কেদারগঞ্জপাড়ার ৪ জন, হাসপাতালপাড়ার ৫ জন, কোর্টপাড়ার ৮ জন, ঈদগাঁপাড়ার একজন, মাদরাসাপাড়ার ৩ জন, মুক্তিপাড়ার ৩ জন, পলাশপাড়ার ২ জন, শেখপাড়ার একজন, বুজরুকগড়গড়ির একজন, নূরনগরের একজন, গোরস্তানপাড়ার একজন, এতিমখানপাড়ার একজন, দৌলাতদিয়াড়ের একজন, ঝোড়াঘাটার একজন, গড়াইটুপির একজন ও জালশুকার ২ জন। জীবননগর উপজেলার নতুন ৫ জনের মধ্যে জীবননগর পোস্ট অফিসপাড়ার একজন, বাসস্ট্যান্ডপাড়ার একজন, ধোপাখালীর একজন, হাসপাতালপাড়ার একজন। দামুড়হুদা উপজেলার ৫ জনের মধ্যে দর্শনা পুরাতন বাজারপাড়ার একজন, দামুড়হুদা পুরাতন হাউলির একজন, দামুড়হুদা গুলশানপাড়ার একজন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫ জনের মধ্যে আলমডাঙ্গা স্টেশনপাড়ার একজন, মুন্সিগঞ্জের একজন, ব-বিলের একজন, হাটবোয়ালিয়ার একজন ও গোকুলখালীর একজন রয়েছেন।

আলমডাঙ্গা উপজেলার সাদরে আলম মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি গড়চাপাড়ার মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। নিজের বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া হয়। এরপর তাকে নেয় হয় ঢাকার উদ্দেশে। মারা যান তিনি। তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। ফলে তার বাড়িতে আর কেউ আক্রান্ত কিনা তা দেখার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, গত সোমবার সকালে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন ফারজানা তাসলিমা। তিনি পেশার ও কিডনি জটিলতায়ও ভুগছিলেন। করোনার উপসর্গ থাকায় সদর হাসপাতালের প্রথমে করোনা ওয়ার্ডের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় তিনি করোনা শনাক্ত হন। বুধবার দুপুরে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। করোনায় মারা যাওয়া ফারজানা তাসলিমা (৪২) আলমডাঙ্গার থানাপাড়ার আব্দুল গণির স্ত্রী।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় দিন দিন নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার লাভ করছে। প্রথম দিকে করোনা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ১০/১২ শতাংশ হারে পজিটিভ হলেও দিন গড়ানোর সাথে সাথে এই হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যতো বেশি পরীক্ষা করানো হচ্ছে, ততোই করোনা ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেমন ছড়াচ্ছে ছোঁয়াছে রোগ, তেমনই পরিবারের সকল সদস্যও আক্রান্ত হয়ে অনিশ্চয়তার দিনগুনছেন। যদিও আক্রান্ত তুলনায় মৃত্যুর হার এখনও পর্যন্ত দেড় দু শতাংশের বেশি নয়, তবুও ভয়াবহ হারে রোগ ছড়ানোর কারণে পরিণতি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেকে। তাছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই উপসর্গ নিয়ে অনেকেই ঘুরছেন জনসাধারণের মাঝে। কেউ কেউ করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েও দাওয়াত খেতে যাচ্ছেন অন্যদের সাথে মিশে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজপাড়ার এক সাবেক জনপ্রতিনিধিকেও সম্প্রতি আলমডাঙ্গার আমন্ত্রণে অংশ নিতে দেখা যায়। অবাক হলেও সত্য, যেদিন তিনি জেলার শীর্ষ কয়েক নেতার সাথে দাওয়াতে অংশ নেন, ওইদিনিই তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসে পজিটিভ। তার পিতাও আক্রান্ত। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও নমুনা দেয়ার পর অন্যের সংস্পর্শে এলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। এ প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তথা জেলা প্রশাসক বলেন, সচেতনতারাও যদি দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেন তা হলে রোগ প্রতিরোধ হবে কীভাবে? সমাজের সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। এতো প্রচার প্রচারণার পরও সমাজকে সুস্থ রাখতে সমাজের সকলকেই সচেতন হওয়া জরুরী। কারো উপসর্গ দেখা দিলেই তার উচিৎ অন্যের সংগ ত্যাগ করা। পরিস্থিতি বুঝে নমুনা পরীক্ষা করানো। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত যেমন সঙ্গনিরোধ বিধি মানা উচিৎ, তেমনই পজিটিভ হলে তাকে আইসোলেশনে যাওয়া দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে নাকি প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলশেন থাকবেন তা ঠিক করে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি তো নয়ই, অন্য কেউ যেনো তার মাধ্যমে আক্রান্ত না হন সেদিকে আন্তরিক হতে হবে। অপরদিকে প্রতিবেশীদেরও সহযোগিতার হাত বাড়তে হবে। আক্রান্ত বাড়ির দিকে বাঁকা চোখে না তাকিয়ে বরঞ্চ তাদের প্রয়োজন কীভাবে মেটানো যায় সেদিকেও আন্তরিক হওয়া মানবিক ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More