ঈদযাত্রায় জিম্মি বাসযাত্রীরা : ১২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি

নন-এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ : মানছে না পরিবহন কর্তৃপক্ষগুলো

স্টাফ রিপোর্টার: এবারের ঈদযাত্রায়ও পরিবহন খাতে নৈরাজ্য অব্যাহত আছে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের খ্যাতনামা পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো রুটভেদে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে। পরিবহন কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট, বিডি টিকিটের ভাড়ার চার্ট ও বেশ কিছু কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, শুধু এসি বাসই নয়, বিভিন্ন রুটে নন-এসি বাসেও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। নন-এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নেয়া বেআইনি বলা হলেও সেটি মানছে না পরিবহন কর্তৃপক্ষগুলো। সারা দেশের সেতুর টোল ও ফেরি সার্ভিসের ফি বাড়ায় চলতি মে মাসে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে ৪০ আসনবিশিষ্ট বাসের নতুন ভাড়ার খসড়া নির্ধারণ করেছে বিআরটিএ। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে মেহেরপুরের দূরত্ব ২৪৯ কিলোমিটার। এ রুটে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া ৬৭৩ টাকা। তবে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া এতোদিন নেয়া হতো সাড়ে ছয়শ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে এ রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর ভাড়াও একই। তবে রয়েল এক্সপ্রেস, গোল্ডেন লাইন, পূর্বাশা পরিবহন, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, জে আরসহ এ রুটের বাসগুলো ঈদযাত্রায় নন-এসির ভাড়া আদায় করছে ৮০০ টাকা। এসি বাসেও নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। রংপুর রুটে শ্যামলী এন.আর ট্রাভেলসের এসি বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১২০ শতাংশ। নন-এসি বাসের ভাড়াও বেড়েছে অনেক রুটে। বাস কোম্পানিগুলোর দাবি, ঈদে ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটের যাত্রী পাওয়া যায়, তবে সেখান থেকে ফেরার পথে ফাঁকা আসতে হয়। সেজন্য ক্ষতি এড়াতে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। আর যাত্রীদের কণ্ঠে ফুটে উঠছে ক্ষোভ। যেটা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই পরিবহন মালিক ও প্রশাসনেরও। শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-রংপুর রুটে এসি বাসের বর্তমান ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এক হাজার টাকা। তবে পরিবহনটির ওয়েবসাইটে আগামী ৫ জুন একই রুটের এসি বাসের ভাড়া দেখাচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ ঈদযাত্রায় এ রুটে ১২০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে পরিবহন কোম্পানিটি। উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড় রুটে নাবিল পরিবহনের ইকোনমি ক্লাস এসির ভাড়া এক হাজার ৩০০ টাকা। ঈদে এক হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে এই রুটে। ঈদযাত্রায় রাজশাহী রুটে এসি বাসের ভাড়া ৬৩ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে দেশ ট্রাভেলস। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত বিজনেস ক্লাস এসি বাসের ভাড়া এক হাজার ১০০ টাকা। ঈদে অতিরিক্ত ৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে নন-এসি বাসের ভাড়া অপরিবর্তিত রেখেছে দেশ ট্রাভেলস। অনলাইন প্লাটফর্ম ‘বিডি টিকেটস’ এর আগামী ৫ জুনের ঢাকা-রংপুর রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। একই টিকিটের জন্য গতকাল সোমবার (২৬ মে) নেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। হানিফ এন্টারপ্রাইজ ভাড়া বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ। শ্যামলী পরিবহনের ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রংপুরের এসি বাসের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার ২০০ টাকা। ঈদে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ ভাড়া বেড়েছে ৮০০ টাকা বা ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও শ্যামলী এন.আর ট্রাভেলসের মালিক শুভংকর ঘোষ রাকেশকে একাধিক বার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। হানিফ এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ ঢাকা মেইলকে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরকারের চার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায় করছি। গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে খুলনার ফুলতলা এবং ঢাকার মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনার ফুলতলা কাউন্টার পর্যন্ত আজকের গোল্ডেন লাইনের নন-এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ছয়শ টাকা। আর ইকোনমি এসি বাসের ভাড়া সাড়ে সাতশ টাকা। আগামী ৫ জুন একই রুটে নন-এসি ৭৫০ ও ইকোনমি এসি বাসের ভাড়া এক হাজার ১০০ টাকা নিচ্ছে পরিবহনটি। ঢাকা-রংপুর রুটে স্বাভাবিক সময়ে নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা। তবে শ্যামলী এন.আর ও শ্যামলী পরিবহন অতিরিক্ত নিচ্ছে ৬০ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া ৮২০-৮৫০ টাকা পর্যন্ত। বিআরটিএর নির্ধারণ করা খসড়া তালিকা অনুযায়ী ঢাকার মহাখালী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত নন-এসি বাসের টোলসহ আদায়যোগ্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪০ টাকা। তবে আগামী ৫ জুনের জন্য কেটিসি হানিফের ‘ঈদ-২০৫’ নামের নন-এসি বাসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত টিকিট এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছে ‘বিডি টিকেটস’। এছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ ৮৭০ ও নিউ হিমাচল ট্রাভেলস একই দিনের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নন-এসি বাসের ভাড়া নিচ্ছে ৯০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে নাবিল পরিবহনও। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত পরিবহনটির নন-এসি বাসের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার ১০০ টাকা। ঈদযাত্রায় যাত্রীদের খরচ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১১০ টাকা। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর দায়িত্বহীন আচরণের কারণে পরিবহন মালিকরা খেয়াল-খুশিমতো ভাড়া আদায় করার সাহস পান। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, মানুষ তখনই নিজের ইচ্ছামতো চলে যখন অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ঘুমায়। বিআরটিএ ঘুমাচ্ছে, কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন না। সেজন্যই ঈদ এলে পরিবহন মালিকরা খুশিমতো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এটি সবার কাছে এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। কিন্তু এটি তো অন্যায়। কর্তৃপক্ষও এটিকে অন্যায় মনে করছে না। এদিকে, গত ১২ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে পৃথক ভিজিলেন্স ও মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে বিআরটিএ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), সিটি করপোরেশন ও মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ দুই টিম গঠনের কথা বলা হয়। এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More