উদ্বোধনের ৮ বছরেও চালু হয়নি দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর

আশায় বুক বাঁধা জীবননগর উপজেলাবাসীর মধ্যে বন্দরটি চালুর ব্যাপারে হতাশা

জীবননগর ব্যুরো: ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের ৮ বছর পার হলেও অদ্যাবধি চুয়াডাঙ্গার দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু হয়নি। ফলে আশায় বুক বাঁধা জীবননগর উপজেলাবাসীর মধ্যে বন্দরটি চালুর ব্যাপারে হতাশা কাজ করছে। দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া বন্দরটি চালু হলে সহজেই ভারতের সাথে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি করা যাবে। এ স্থলবন্দরটি চালু হলে ঢাকা থেকে কোলকাতার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার কমে যাবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের তুলনায় এ স্থলবন্দর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সময়ও ২-৩ ঘণ্টা কমিয়ে দেবে। দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় সরকার বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে। বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করে। সেগুলো খালাস করতে তিন থেকে ১৮ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দৌলৎগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে এখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে। এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়া এখানে স্থানীয় শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

স্থানীয়রা জানান, দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ সীমান্তে অবস্থিত। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অন্তর্গত মাজদিয়া সীমান্ত এই বন্দরের বিপরীতে অবস্থিত। এই বন্দরের রুট দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া সড়ক যোগাযোগ। দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব মাত্র ২৫৬ কিলোমিটার। উভয় দেশের সীমান্ত পর্যন্ত চওড়া পাকা রাস্তা রয়েছে। বন্দরটি চালু হলে আমদানি-রফতানি কাজে পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় ও দ্রুত সময়ে পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুতের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সব সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।

দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোর্তূজা জানান, ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিলো। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি ফের চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে আবারো এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবার শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দরটিতে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর (স্থল কাস্টমস স্টেশন) হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এখন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর দেখার বিষয় কত দিনে তা বাস্তবায়ন হয়। তিনি আরও জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই জীবননগর দৌলতগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিলো। সে সময় একই বছর ২৪ আগস্ট তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খাঁন চালুর অপেক্ষায় থাকা এই বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৪ জুন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খাঁন ও তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। সেই সময় এই বাংলাদেশ-ভারত সরকারের দুই ঊর্ধŸতন কর্তা দ্রুত সময়ে বন্দরটি চালুর ঘোষণা করলেও পরে সে উদ্যোগ থমকে যায়।

দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল জানান, যশোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় বন্দরে তিন একর জমিতে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। প্রথমদিকে ২০০ গাড়ির মালামাল লোড-আনলোড করা সম্ভব। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতার ৩০ ফুট চওড়া রাস্তাসহ জীবননগর পর্যন্ত ২০ ফুট চওড়ার ৬ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এছাড়াও বন্দর এলাকায় আরও ৪০ দশমিক ৪৮ একর জমি সহজলোভ্য দামে অধিগ্রহণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সকল সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দুরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। তাছাড়া ভারতীয় অংশে টুঙ্গি থেকে কৃষ্ণনগর ৩৪নং জাতীয় মহাসড়ক থেকে সকল স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব। জাতীয় সড়ক থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের যে দূরত্ব তার থেকে অনেক কম দুরত্ব অর্থাৎ ২৫ কিলোমিটার দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর। যার কারনে ভারতের সাথে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি ও পরিবহন খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে।

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, বন্দরটি চালু হলে জেলার ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য। পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More