আলমডাঙ্গা ব্যুরো: শ্রাবণের আকাশে মেঘ মেদুর ছায়া, ভেজা ভেজা পলকা বাতাসে ভাসছে ফুলের গন্ধ। তবু সেই মেঘলা দুপুর যেন আমল ধবল আলোয় ভরে তুলেছিল লাইলা কনভেনশন হল। ফুলেল সাজে মোড়া মঞ্চে একে একে জড়ো হচ্ছেন আলমডাঙ্গার উপজেলা প্রেসক্লাবের সৈনিকেরা। কারও হাস্যমুখ, কারও চোখে স্বপ্নের দীপ্তিÍসবাই অপেক্ষায় একটি মুহূর্তের, যে মুহূর্তে দায়িত্ব, নৈতিকতা আর সত্যের শপথ মিলেমিশে নতুন যাত্রার সূচনা করবে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের এই শপথ অনুষ্ঠান যেন হয়ে উঠেছিল এক উৎসব, যেখানে প্রতিশ্রুতির ভাষা লিখিত হচ্ছিলো মানুষের মুখে মুখে, আর লাইলা কনভেনশন হল হয়ে উঠেছিল প্রত্যয় দীপ্ত শপথের মিলনমেলা। গতকাল ৯ আগস্ট শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত দ্বিবার্ষিক কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সকল নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত সভাপতি নাহিদ হাসান। প্রধান অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, “সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি জাতির বিবেক। তথ্যের নির্ভুলতা, সত্যনিষ্ঠতা এবং নৈতিকতা এই তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েই প্রকৃত সাংবাদিকতা টিকে থাকে। আশা করি নতুন কমিটি সেই আলোকে কাজ করবে।” বিশেষ অতিথি, আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু বলেন, “একজন সৎ সাংবাদিক সমাজের আয়না। এই আয়না যত স্বচ্ছ হবে, রাষ্ট্র ও সমাজ তত সুন্দরভাবে নিজেকে দেখতে পাবে। নতুন নেতৃত্ব সেই স্বচ্ছতা রক্ষায় অবিচল থাকুক।” বিশেষ অতিথি, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান (পিপিএম) বলেন, “সত্য প্রকাশে সাহসী সাংবাদিকই পুলিশের সহযোদ্ধা। অপরাধ দমনে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।” বিশেষ অতিথি, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, “সাংবাদিকতার ইতিহাসই হলো সত্যের পক্ষে কলম ধরার ইতিহাস। যারা এই শপথ নিলেন, তারা যেন সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালান। তিনি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের সিপাহসালারদের নিরাপত্তায় রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিশেষ অতিথি, সিনিয়র সাংবাদিক রহমান মুকুল বলেন, “সাংবাদিকের কোনো ব্যক্তিগত বন্ধু থাকে না। সত্য ও ন্যায়ের অমল জ্যোতিই তাদের একমাত্র বন্ধু। কদমবুচি, ‘জ্বি হুজুরি’ ও দলদাসত্বের সাংবাদিকতা পরিহার করার আহ্বান জানান তিনি। তা না হলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ভেঙে পড়বে বলে তিনি সতর্ক করেন।” এমএস জোহা কলেজের সহকারী অধ্যাপক একেএম ফারুক হোসেনর উপস্থাপনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. লিয়াকত আলী, জেলা জামায়াতের যুব বিভাগের সভাপতি শেখ নূর মোহাম্মদ হোসাইন টিপু, আইন ও আদালত বিষয়ক সম্পাদক দারুস সালাম, উপজেলা জামায়াতের আমীর প্রভাষক শফিউল আলম বকুল, পৌর জামায়াতের আমীর মাহের আলী, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মামুন রেজা, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মুসলিম উদ্দিন, উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহবায়ক মোল্লা ফারুক এলাহী ইসলাম, আমার বাংলাদেশ পার্টির নেতা মুসাব ইবনে শাফায়েত, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ কেন্দ্রীয় কমিটির রাকিব মাহমুদ, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম, বণিক সমিতির সভাপতি আরেফিন মিয়া মিলন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, আসিফ আল নুর তামিম, সাবেক ব্যাংকার শহিদুল ইসলাম, অ্যাড. ইকরামুল হক, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক খন্দকার শাহ আলম মন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক বশিরুল আলম, উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মীর আসাদুজ্জামান উজ্জ্বল, মাওলানা ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শেষভাগে উপস্থিত হয়ে পরিবেশ আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। তিনি হৃদ্যতার আলোয় মুগ্ধ করেন উপস্থিত সকলকে। তার সাথে ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু। প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সভাপতি নাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক শাওনসহ সহ-সভাপতি সাইফুল হুদা ও আব্দুল্লাহ হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম অনিক ও হোসেন তামজীদ, ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ শরীফ, সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জু আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রোকন, ধর্ম সম্পাদক ইখলাস উদ্দিন, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক কাজী ফারুক আহম্মদ সোহাগ, ক্রীড়া সম্পাদক রিপন আলী, প্রচার সম্পাদক মীর রোকনুজ্জামান এবং কার্যনির্বাহী সদস্য সেলিম রেজা, আরিফুল ইসলাম, খোন্দকার সালাহউদ্দিন নির্বাচিত হন। ফুলেল শুভেচ্ছা, দৃঢ় অঙ্গীকার ও শপথের উজ্জ্বল আলোয় শেষ হয় দিনের এই অনন্য আয়োজন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.