এ্যান্ড্রু কিশোরের দেহ রাজশাহী মেডিকেলে : অস্ট্রেলিয়া থেকে ছেলে মেয়ে এলে সমাহিত

শেষকৃত্য আগামী ১৫ জুলাই সম্পন্ন হতে পারে

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের উজ্জল নক্ষত্র এন্ড্রু কিশোর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সোমবার রাজশাহীতে স্বর্গীয় হওয়ার পর তার দেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়া থেকে বাবাকে শেষ দেখার জন্য দেশে ফিরছেন। তারা দেশে এলে সমাহিত করা হবে কিশোরকে। তবে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তার দুলাভাই ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস। তিনি ফোনে সংবাদ মাধ্যমকে তথ্য দিয়েছেন মঙ্গলবার।

মারণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রাম করে সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় মারা যান জনপ্রিয় এ শিল্পী। এন্ড্রু কিশোরের মেয়ে সঙ্গা (২৬) ও ছেলে সপ্তক (২৪) অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। সঙ্গার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু একজন চিকিৎসক। তিনি রাজশাহীতেই বসবাস করেন। এন্ড্রু কিশোরের বন্ধু ড. দ্বীপকেন্দ্র নাথ দাস জানান, দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরলে তাদের বাবার মরদেহ সমাহিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরেই থাকবে। শিল্পীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মায়ের পাশেই তাকে সমাহিত করা হবে। এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে; সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে অনুরক্ত ছিলেন তিনি। সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনায় পড়লেও গানই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। একসময় গানের নেশায় এন্ড্রু কিশোর ছুটে পৌছেঁ যান রাজধানী ঢাকায়। চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে; মেইল ট্রেন-এ আলম খানের সুরে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এর পর বাদল রহমানের এমিলের গোয়েন্দা বাহিনীতেও কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৭৯ সালে প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গান গাওয়ার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। তার গাওয়া ভালোবেসে গেলাম শুধু, সবাই তো ভালোবাসা চায়, আমার বুকের মধ্যিখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে- এমন অনেক গান এখনও মানুষের মুখে ফেরে। গান গেয়ে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন তিনি। ‘৯০-এর দশকের শেষ দিক পর্যন্ত চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তার। ওই সময়েও তার গাওয়া ‘পড়ে না চোখের পলক’ গানটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়।
বেশ কিছু দিন অসুস্থ থাকার পর এন্ড্রু কিশোরের ক্যান্সার ধরা পড়ে। গত বছর সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসা শেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ১১ জুন তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও ১০ জুন এক পরীক্ষায় তার শরীরে আবারও লিম্ফোমার অস্তিত্ব মেলে। সিঙ্গাপুরে ৯ মাস ধরে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জুন দেশে ফিরে পর দিন রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন শিখা বিশ্বাসের ক্লিনিকে ভগ্নিপতি ও চিকিৎসক প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। এখানেই সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More