কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে তিন জেলার ১৪৮ নমুনা পরীক্ষা

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের ১৪ জনসহ ২৫ জনের করোনা পজেটিভ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নতুন করে ৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে সদরে দুজন, আলমডাঙ্গায় একজন এবং জীবননগরে ৬ জন। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৯ জন। মেহেরপুরে এক পুলিশ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীসহ নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৯। কুষ্টিয়ায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। গতকাল সোমবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ৩০, মেহেরপুরের ২৫ ও কুষ্টিয়ায় ৯৩টিসহ মোট ১৪৮ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ২৫ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন পৌছায়।
চুয়াডাঙ্গায় ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নতুন করে ৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাব থেকে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে ৯ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮৯ জনে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০১ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে দুজনের। গতকাল সোমবার বিকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জনের নমুনার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দুজন, জীবননগর উপজেলার ৬ জন ও আলমডাঙ্গা উপজেলার একজন। নতুন আক্রান্তরা হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জীবননগরে আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে পাঁচজনই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড জীবননগর শাখায় কর্মরত। তাদের মধ্যে ব্যাংকের অফিসার একজন, জুনিয়র অফিসার একজন, জুনিয়র ক্যাশ অফিসার দুুজন ও একজন সিকিউরিটি গার্ড। জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সদর উপজেলায়। যেখানে ৬৫ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জনই সুস্থ হয়েছেন। প্রাণ গেছে একজনের। আলমডাঙ্গায় আক্রান্ত ৪৬ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৭ জন, দামুড়হুদায় ৫৯ জন আক্রান্ত। ইতোমধ্যেই ২৭ জন বেঁচে ফিরেছেন। মৃত্যু হয়েছে একজনের। জীবননগর উপজেলায় করোনার শিকার ১৯ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬ জন। গত ১৯ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন আলমডাঙ্গা উপজেলার ইতালিফেরত এক যুবক।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, করোনা মোকাবেলায় ঘর থেকে বের না হওয়ায় সব থেকে উত্তম। এরপরও জরুরি প্রয়োজনে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরে বের হতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর এলাকার রেড জোন ৫ ও ৭নং ওয়ার্ডে গতকাল সোমবার থেকে লকডাউন চলছে। রেড জোন এলাকায় গত রোববার থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গত ১৭ জুন বিকেল ৫টা থেকে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার ৫ ও ৭নং ওয়ার্ড রেড জোন হওয়ায় জেলা প্রশাসন লকডাউন হিসাবে ঘোষণা দেয়। ৫নং ওয়ার্ডের পরানপুর গ্রামের রিফিউজি কলোনি ও ৭নং ওয়ার্ডের থানাপাড়া এলাকা রেড জোনের আওতায় রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নিয়ম মেনে চলার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও দর্শনা থানা পুলিশ লকডাউন কার্যকর করতে কাজ করছে। দুটি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে বারণ করা হয়েছে। জনসচেতনায় কাজ চলছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে নতুন করে আরও ৫ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল সোমবার ২৫টি নমুনা পরীক্ষায় এক পুলিশ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীসহ নতুন ৫ জন হন এ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০ জন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসসূত্রে জানা গেছে, নতুন শনাক্ত পাঁচজনের মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছেন ৩ এবং মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলায় রয়েছেন দুজন। সদর উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মেহেরপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত এক এএসআই, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারী এবং ৫২ বছর বয়সী শহরের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা। মুজিবনগরে এক ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি এবং গাংনীতে ৫০ বছর বয়সী এনজিওকর্মী এক নারী। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া ওই কর্মচারী পাঁচদিন আগে অসুস্থতাবোধ করলে তাকে নিজবাড়িতে সঙ্গরোধে রেখে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ এবং হোম আইসোলেশনে আছেন। গাংনী উপজেলায় আক্রান্ত একজন হচ্ছেন তেরাইল গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক নারী। তিনি পলাশীপাড়া সমাজকল্যাণ সমিতির ঋণ কর্মসূচিতে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত। কয়েকদিন আগে তিনি শারীরিক অসুস্থতাবোধ করলে নমুনা প্রদান করেন। ওইদিন থেকেই তিনি নিজ বাড়িতে সঙ্গরোধে রয়েছেন। আক্রান্ত অপরজন হচ্ছেন মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি।
গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯। এরমধ্যে সদরে ২৪ জন, গাংনী উপজেলায় ২০ জন ও মুজিবনগর উপজেলায় ৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ২০ জন। জেলায় করোনায় মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে আক্রান্ত অবস্থায় আইসোলেশনে থাকাকালীন একজনের মৃত্যু হয়, বাকি তিনজনের মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, পিসিআর ল্যাবে গতকাল মোট ১৪৮টি স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় ৯৩, মেহেরপুরে ২৫, চুয়াডাঙ্গায় ৩০। কুষ্টিয়ায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ জন, কুমারখালীতে একজন, দৌলতপুরে একজন, মিরপুরে একজন ও খোকসায় ৩ জন। মেহেরপুর জেলায় ৫ জন ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৯ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুজন, দৌলতপুর উপজেলার একজন ও মেহেরপুর জেলার একজন মোট ৪টি ফলোআপ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। বাকিগুলোর ফলাফল নেগেটিভ। কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৫ জনের ঠিকানা চৌড়হাস একজন, পূর্ব মজমপুর একজন, পশ্চিম মজমপুর একজন, মারকাস গলি একজন, চর আমলাপাড়া একজন। কুমারখালী উপজেলায় আক্রান্ত একজনের ঠিকানা খয়েরছাড়া, মথাপাড়া। দৌলতপুর উপজেলায় আক্রান্ত একজনের ঠিকানা মহেশকু-ি। মিরপুর উপজেলায় আক্রান্ত একজনের ঠিকানা ছাতিয়ান। খোকসা উপজেলায় আক্রান্ত তিনজনের ঠিকানা চকহরিপুর একজন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুজন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More