কুষ্টিয়া হাসপাতালে করোনায় আরও ৬ জনের মৃত্যু

চলমান লকডাউন বাড়িয়ে ১ জুলাই সকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে কুষ্টিয়া জেলায় চলমান লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। আপাতত আগামী ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ থাকবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। রোববার রাত আটটায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৬৩। করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪০ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন জানান, হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির চাপ অব্যাহত রয়েছে। চাপ সামলাতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের গলদঘর্ম হওয়ার জোগাড়। উপজেলা সদর এমনকি জেলার দূর-দূরান্ত থেকেও করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে মানুষ ভিড় করছেন। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল যা আছে তা দিয়ে রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে। তবে এভাবে রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে অতিরিক্ত আরও লোকবল প্রয়োজন হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলো প্রতিদিনই খালি হচ্ছে। খালি হয়ে যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো আগে কুষ্টিয়া থেকে রিফিল করা গেলেও বর্তমানে তা সম্ভবপর হচ্ছে না। এগুলো প্রতিদিন দু’বার করে রিফিলের জন্য যশোর জেলায় পাঠানো লাগছে। রিফিল করে পুনরায় যশোর থেকে নিয়ে আসতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালের করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে এখন আর করোনা ছাড়া অন্য কোনো রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। হাসপাতালটি করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করে বহির্বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্য রোগীদের পার্শ্ববর্তী ডায়াবেটিকস ও আদ্বদীন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে।
এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ১৮৫ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ২৮০ জন। মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৯৫ জনের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৬৩ জন, দৌলতপুরের ২৪ জন, কুমারখালীর ৩৬ জন, ভেড়ামারার ২৯ জন, মিরপুরের ২২ জন ও খোকসার ২১ জন।
এখন পর্যন্ত জেলায় ৫৯ হাজার ৭৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৮ হাজার ৩০৩ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭২০। এদের মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন ১৬৪ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৫৫৬ জন।
করোনা সংক্রমণ কমাতে কয়েক দফায় কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় নানা বিধিনিষেধ আরোপের পর ২০ জুন রাত ১২টা থেকে কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। এ লকডাউন চলবে আগামী ২৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত।
জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে জেলাজুড়ে লকডাউন শুরু হয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলায় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, শপিং মল, দোকান, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় (মুদি) পণ্য ও ওষুধের দোকান সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। লকডাউন চলাকালে সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আন্তজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ইজিবাইক, থ্রি-হুইলারসহ সব যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। সব সাপ্তাহিক হাট ও গরুর হাট বন্ধ থাকবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হবেন, তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণবিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, গণমাধ্যম, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল ও ফায়ার সার্ভিস চালু থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। একই সময়ে করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন চারজন। লকডাউনের গত ৬ দিনে জেলায় ৭৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩২ জন। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সঠিক সময়ে লকডাউন না দেয়া ও বাস্তবায়ন না করায় এমন হতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More