কেরুজ ডিস্টিলারিতে সোয়া ১৪ লাখ টাকার ডিনেচার স্পিরিট ঘাটতি

সাবেক ৪ ইনচার্জকে ঘাটতি পূরণের টাকা পরিশোধের তাগিদ

দর্শনা অফিস: কেরুজ ডিস্টিলারিতে আলোচিত ডিএস গোডাউনে ঘাটতি ঘটনার প্রায় এক বছর পর কর্তৃপক্ষের চিঠি পেলেন অভিযুক্ত ৪ সাবেক গোডাউন ইনচার্জ। ঘাটতি টাকা পূরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। এ চিঠিতে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা’য়ে পরিণত হয়েছে সকলের। অভিযুক্ত ৪ জনের কেউ এখন কেরুতে কর্মরত নেই। এদের মধ্যে ২জন অবসর গ্রহণ করলেও বাকি ২জনকে বিভিন্ন মিলে বদলি করা হয়েছে। গত ৩১ মার্চ তৎকালীন কেরুজ পার্বতিপুর ওয়্যারহাউজের সহকারি ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেনকে পদন্নোতি দিয়ে দর্শনা ডিএস (ডিনেচার স্পিরিট) গোডাউনের ইনচার্জ হিসেবে বদলি করা হয়। এ দিকে শ্রীমঙ্গল ওয়্যারহাউজের তৎকালীন ইনচার্জ এজাজ আহমেদ বাপ্পি শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ওই হাউজে ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ দফায় অতিরিক্ত ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। জাহাঙ্গীর হোসেনকে ৩১ মার্চ ডিএস গোডাউনে বদলি করা হলেও তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি সে সময়। জাহাঙ্গীর হোসেন গত ২ মে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে জানান, ডিএস (ডিনেচার স্পিরিট) গোডাউনের ৩ নম্বর ভ্যাটের স্পিরিটের গভীরতা রয়েছে ১০৯ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুদ ৩৫ হাজার ৫১২ দশমিক ২৩ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুদ দেখানো হয় ৩৯ হাজার ৭১১ দশমিক ৫৫ লিটার। ৭ নম্বর ভ্যাটের গভীরতা ৫৩ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুদ ৪ হাজার ৮০৪ দশমিক ৩০ লিটার। অথচ হস্তান্তর তালিকায় মজুদ দেখানো হয় ১৩ হাজার ৭৯৫ দশমিক ৭৩ লিটার। এছাড়াও ১০ নম্বর ভ্যাটে ৪ ইঞ্চি স্পিরিট কম রয়েছে। ৩, ৭ ও ১০ নাম্বার ভ্যাটে বাস্তবিক মজুদ অনুযায়ী ১৩ হাজার ১৯০ দশমিক ৭৫ লিটার ডিনেচার স্পিরিট কম রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। জাহাঙ্গীর হোসেনের লিখিত আবেদন ততক্ষনিকভাবে খতিয়ে দেখা না হলেও ২৫ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসেছিলেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কেরুজ চিনিকলের ততকালীন এডিএম ইউসুফ আলীকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরপরই চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিরিন আক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএস (ডিনেচার স্পিরিট) গোডাউনে সিলগালা করেন। এছাড়া ঘটনা তদন্তের জন্য খুলনা বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিলো। কমিটির প্রধান করা হয়েছিলো যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আসলাম হোসেনকে। অন্যরা ছিলেন ঝিনাইদহ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার ও মেহেরপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবুল হাশেম। এ ছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্পকরপোরশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়েও ৩ সদস্যের কমিটি ঘটন করা হয়েছিলো সে সময়। সে কমিটিতে ছিলেন করপোরেশনের (প্রধান ক্রয়) সাইদুর রহমান ও ব্যবস্থাপক (হিসাব) জগলুল হক রানা। সে সময় কোনো কমিটির প্রতিবেদনই গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি। জানা যায়নি ঘাটতির হিসাবও। এ দিকে গত ১৭ মে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র ও প্রধান (পরিদর্শক ও তদন্ত) চৌধুরী রুহুল আমীন কায়সার স্বক্ষরিত পত্রে কেরুজ ডিস্টিলারি ইউনিটের ডিএস (ডিনেচার স্পিরিট) গোডাউনে ১৩ হাজার লিটার ডিনেচার স্পিরিট গায়েব মর্মে ২০২৪ সালের ২৬ জুন জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের ভিত্তিতে করপোরেশন থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএস ভান্ডার হতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০২২ এর ২৯ নং এর ৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অনুমোদনযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য ঘাটতি বাদ দিয়ে অতিরিক্ত ডিএস স্পিরিট ৬২৯৪.৫৪ লিটার স্পিরিট কম পাওয়া গেছে। যার মূল্য ১৪ লক্ষ ২০ হাজার ৯৯২ টাকা ৪০ পয়সা। ২০২৩ সালের ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ১২ কর্মদিবসে ডিএস গোডাউনের ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর রহমান। ২৮ হাজার ৪১৯ টাকা ৮০ পয়সা ঘাটতি বহন করতে হবে আলমগীরকে। গত ২৮ এপ্রিল আলমগীর রহমানকে কেরুজ পাবনা বন্ডেড ওয়্যার হাউজ থেকে বদলি করা হয়েছে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে। ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে দেলোয়ার হোসেনের ৫৯ কর্মদিবসে ডিএস ঘাটতি এক লাখ ২৭ হাজার ৮৮৯ টাকা ৩০ পয়সার। দেলোয়ার হোসেনকে কেরুজ বরিশাল বন্ডেড ওয়্যার হাউজ থেকে গত ২৮ এপ্রিল নাটোর চিনিকলে বদলি করা হলেও তিনি চাকরী থেকে সেচ্চায় অবসর গ্রহণ করেছেন। ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত হারুন অর রশিদের ৬২ কর্মদিবসে ডিএস ঘাটতি ৩ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ টাকা ৩০ পয়সা। বছর খানেক আগে হারুন অর রশিদ অবসর গ্রহণ করেছেন। ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত একেএম সাজেদুর রহমান তুফানের ১১১ কর্মদিবসে ডিএস ঘাটতি ৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। গত ২৮ এপ্রিল সাজেদুর রহমান তুফানকে ডিএস ইনচার্জ থেকে বদলি করা হয়েছে ঠাকুরগাও চিনিকলে। সর্বমোট ১৪ লাখ ২০ হাজার ৯৯২ টাকা ৪০ পয়সা ঘাটতি পূরণের জন্য সাবেক ৪ ইনচার্জকে চিঠি করা হয়েছে। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ৪ জনের মধ্যে একজন সেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেছেন সম্প্রতি, আরেকজন নিয়ম মাফিক অবসরগ্রহণ করেছেন। ফলে ওই দুজনের অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা চিনিকল কর্তৃপক্ষের রয়েছে। বাকী ২ জনকে ওই চিনিকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। টাকা পরিশোধ না করলে পরবর্তিতে সদর দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More