খাস জমি লীজ দিয়ে ভিক্ষুকদের চাষাবাদের সুযোগ করে দিচ্ছেন আলমডাঙ্গার ইউএনও

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ভিক্ষুককে স্বাবলম্বী করতে আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। খাস কৃষি জমি লীজ নিয়ে ২ ভিকুককে এক বিঘা করে জমি দিয়েছেন চাষাবাদ করতে। যাতে অসম্মানজনক পেশা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন। প্রত্যেক ভিক্ষুক পরিবারকে ৪ বছর ওই জমি চাষাবাদ করতে পারবেন। এ জন্য উপজেলা প্রশাসনকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। প্রথম পর্যায়ে উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের দুজন ভিক্ষুক পরিবারকে এক বিঘা করে ভালো ফসলি জমি লীজ নিয়ে তা চাষবাসের জন্য উপহার দিলো আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন। চার বছর পর ওই জমির লীজ বাতিল হয়ে যাবে। জমির প্রকৃত মালিক লীজমানি ফেরত দেবেন উপজেলা প্রশাসনকে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী গতকাল চিতলা ও গাংনী ইউনিয়নের স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক ২ ভিক্ষুককে ১ বিঘা করে কৃষি জমি বুঝিয়ে দেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার শীবপুর গ্রামের ভূমিহীন জন্মান্ধ হাসিবুল ইসলাম। তিনি যখন মাত্র দুই বছরের শিশু সে সময় মাকে হারান। ১২ বছরে হারান বাবাকে। হতদরিদ্র অন্ধ এতিম শিশু হাসিবুল ইসলাম হয়ে পড়েন যারপরনাই অসহায়। এমনিতেই চোখের আলোয় পৃথিবী দেখতে পারেন না। তারপর তিনকুলে আপন স্বজন কেউ নেই। চোখের আলো তো নেই, উপরন্তু বাবাকে হারিয়ে মনের আলোও নিভে যায়। এ অবস্থায় রাস্তায় নামেন ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে। জন্মান্ধ হাসিবুল ইসলামের ভিক্ষাই জীবিকা হয়ে উঠে সেই শৈশব থেকে।
এখন, মধ্যবয়স্ক হাসিবুল ইসলাম সপরিবারে বসবাস করেন শিবপুরের খাসজমিতে। তিন ছেলে রয়েছে তার। সবাই শিশু। সকলের বড় ওয়াজকুরুনী। তার বয়স ১৩ বছর। এ বয়সেই ওয়াজকুরুনীকে ভ্যানচালকের পেশায় নাম লেখাতে হয়েছে। প্রতিদিন দেড়শ’ টাকায় পাখিভ্যান ভাড়া নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয় তাকে। বয়স্ক ও ভ্যানচালকদের সাথে প্রতিযোগিতায় হার মানতে হয় তাকে। দিন শেষে ভ্যানমালিককে ভাড়ার টাকা মিটিয়ে কোন দিন একশ’, কোনদিন মাত্র পঞ্চাশ টাকা আবার মাঝে মধ্যে ঘরের টাকা দিয়েও মালিকের ভাড়া মেটাতে হয়। আর্থিক অনটনে থাকা জন্মান্ধ ভিক্ষুক হাসিবুল চার বছরের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেয়া এক বিঘা জমি চাষাবাদের সুযোগ পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে সমাজের মূলধারায় ফেরার অঙ্গীকার করেছেন। ছেলে ওয়াজ কুরুনী ৪ বছরের জন্য পাওয়া জমিতে জানপ্রাণ দিয়ে পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, “আমার পিতা আর ভিক্ষে করবে না।”
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী তাকে জমি বুঝে দিতে গেলে আনন্দে কেঁদে ফেলেন হাসিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভিক্ষুক বদনাম ঘোচাতে রাতদিন ছেলে বউ নিয়ে মাঠে চাষাবাদ করবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুল হালিম বলেন, “পাকা সড়কের পাশে অবস্থিত যে জমি ভিক্ষুককে দেয়া হয়েছে, সেটিতে সব ধরনের ফসল আবাদ করা যায়। ৪ বছর ভালোভাবে আবাদ করলে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে।”
একই উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে তোফাজ্জেল হোসেনকেও (৪৬) একই শর্তে এক বিঘা জমি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তিনিও ভিক্ষা করেন। তিন ছেলে ৩ মেয়ের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন জমি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ”আমাদের কোনোদিন জমি ছিলো না। ৪ বছরের জন্য হলেও তো মাঠে নিজেদের জমি হলো।”
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী বলেন, ইতোপূর্বে ভিক্ষুকদের নগদ অর্থ, দোকান করে দেয়া, ছাগল কিনে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে আর কিছুই থাকে না। তারা ভিক্ষাবৃত্তিও পরিত্যাগ করেন না। এই জন্য যারা ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে চান, তাদেরকে ১ বিঘা করে ফসলি জমি লীজ নিয়ে দেয়া হচ্ছে। ৪ বছর তারা ওই জমি চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবেন। ৪ বছর শেষে জমির মালিক জমি ফেরত পাবেন। আর জমির মালিক লীজমানির পুরো টাকা উপজেলা প্রশাসনকে ফেরত দেবে। তাছাড়া এই প্রকল্পের ভিক্ষুক পরিবারকে অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়ও রাখা হবে।”

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More